কক্সবাজার প্রতিনিধি •
৪২ কোটি মূল্যের ১৪ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদক বিক্রির ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ নগদ টাকা উদ্ধারের মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
একই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে ৫ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড ও দণ্ডিত আবুল কালামকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড সেটি অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
রায়ে উদ্ধারকৃত ইয়াবা বিক্রির ২ বস্তাভর্তি নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। রায়ে আসামি আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে (১৯) বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ টাকা উদ্ধারের চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রায় ঘোষণা দেন। একই আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়া আসামি হলেন- নজরুল ইসলাম ও সোলতানা রাজিয়া বেগমের ছেলে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক (৩৭), মোজাফফর আহমদ ও হাজেরা খাতুনের ছেলে নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু (৫৫) এবং আবুল হোসেন ও হাসনা বানুর ছেলে আবুল কালাম (৫০)। এই তিন আসামির সকলের বাড়ি কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটায়। রায় ঘোষণার সময় ৪ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ এবং আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম, অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক ও অ্যাডভোকেট আবদুল বারী মামলাটি পরিচালনা করেন।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) একটি টিম কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী-খুরুস্কুল সংযোগ সেতুর উত্তরে ভারুয়াখালী খাল থেকে একটি কাঠের তৈরি বোট আটক করে। বোট থেকে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম পালিয়ে যায়। ধৃত আসামিদের দেখানো মতে উক্ত বোট তল্লাশি করে ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ১৪ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
পরে আসামিদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মতে ওই দিন বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়া ছটার আসমি জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ইয়াবা বিক্রির ২টি বস্তাভর্তি নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে আসামি আবুল কালাম এবং আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক, নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু, আবুল কালাম ও শেখ আবদুল্লাহ এবং অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এস.এম শাকিল হাসান ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আমলী আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে রোববার চার্জ গঠন (অভিযোগ) করা হয়।
মামামলাটির ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামি পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়। রায়ে উদ্ধারকৃত ইয়াবা বিক্রির ২টি বস্তাভর্তি নগদ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখায় জমা থাকা অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলাটি চার্জ গঠনের মাত্র ৫২ দিন পর বিচারের সব ধাপ সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-