সংবাদ বিজ্ঞপ্তি •
বাংলাদেশের কক্সবাজারে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের রেশনের পরিমাণের পরিকল্পিত হ্রাস তাদের মধ্যে অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়াবে এবং স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবিক চিকিৎসা সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স/ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।
অর্থসহায়তার পরিমাণ কমে গেছে উল্লেখ করে, গতকাল থেকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রেশনের পরিমাণ প্রায় ১৭% কমিয়েছে, যা জনপ্রতি ক্যালরি গ্রহণের সুষম মানদন্ড প্রতিদিন ২১০০ ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণকেও কমিয়ে আনবে।
কক্সবাজার জেলার বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের বসবাসকারী রোহিঙ্গারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল,কারণ তাদের জীবন রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান খুঁজে বের করা আইনত নিষিদ্ধ, এসব সীমাবদ্ধতা তাদের পরিপূরক খাদ্য গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। তাদের দৈনন্দিন ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ সুপারিশকৃত পরিমাণের চেয়ে কম।
প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরির স্বল্পতা মানুষকে অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতার ঝুঁকিতে ফেলে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো দুর্বল করে; হাম ও কলেরার মতো সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এমএসএফের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে প্রসব-পূর্ববর্তী সেবা নেওয়া অনেক গর্ভবতী নারীই অপুষ্টিতে ভুগছেন। গতবছর, কুতুপালঙ হাসপাতাল এবং বালুখালি ক্লিনিকে ১২ শতাংশ গর্ভবতী মহিলার ভয়াবহ অপুষ্টি এবং ৩০ শতাংশ নারীর রক্তশূন্যতার শিকার।
যে-সব মায়েরা অপুষ্টি এবং রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের প্রসবের সময় জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি বেশি, ফলে তাদের নবজাতক শিশুদের দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রেশনের পরিমাণ কমানোর আগে যে পরিমাণ ছিল তাতেও কুতুপালং হাসপাতাল এবং বালুখালি ক্লিনিকে ২৮ শতাংশ শিশু স্বাভাবিকের চাইতে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়, যা তাদের অসুস্থ ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী অনেক মানুষ হৃদ্রোগ,উচ্চ রক্তচাপ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। এমএসএফ বর্তমানে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি রোগীকে অসংক্রামক রোগের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই রোগীদের স্বাস্থ্যজনিত নানা সমস্যা রোধ করার জন্য সুষম খাদ্যের জোগান ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত খাবার না খেলে শারীরিক নানা সমস্যা বাড়বে এবং চিকিৎসাসেবার ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে, যাতে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোর ওপর স্বাস্থ্যসেবার চাহিদার চাপও বাড়বে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যেই প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছে কারণ তারা সেখানকার মানুষের ভয়াবহ জীবনযাত্রার চিকিৎসার প্রভাবগুলো মোকাবেলা করতে লড়াই করছে, যার মধ্যে বারবার স্ক্যাবিস, ডেঙ্গু জ্বর এবং কলেরা – ভঙ্গুর স্যানিটেশন,জমে থাকা পানি এবং উপচে পড়া ল্যাট্রিন।
এমএসএফ উদ্বিগ্ন যে খাদ্যের রেশন কমানো হলে তা ক্যাম্প জুড়ে ইতিমধ্যে বিরাজমান হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং আরও বেশি রোহিঙ্গা উন্নত জীবন এবং অধিক আশাপূর্ণ ভবিষ্যতের সন্ধানে অত্যন্ত বিপজ্জনক সমুদ্র এবং স্থলপথ দিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
বাংলাদেশে এমএসএফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্লাউদিও মিগলিটা বলেছেন,“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার সম্মানের সাথে টিকে থাকা সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদাসীন হয়ে গেছে। “অনুদান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারে কাজ করা সাহায্য সংস্থারগুলোর সংখ্যা ৮০ ভাগ কমে গেছে। দাতাদের অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পুনর্গঠন করতে হবে।”
এমএসএফ ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার শরণার্থী শিবিরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। গত বছর, এমএসএফের বহির্বিভাগ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন এবং ২২ হাজারের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-