সৈয়দুল কাদের, ডেইলি কক্সবাজার •
সাগর পথে মানবপাচারে গড়ে উঠেছে কক্সবাজার ও চাঁদপুর কেন্দ্রিক একটি বড় সিন্ডিকেট। সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে মিয়ানমারে বন্দী করে টাকা আদায় করছে এই চক্র। টাকা আদায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে চাঁদপুরের ইসলামী ব্যাংকের একটি একাউন্ট। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের একটি গোপন স্থানে আটকে রেখেছে অন্তত ১২ জন বাংলাদেশী। এতে রোহিঙ্গাও রয়েছে।
সম্প্রতি প্রায় ৭০ জনকে এই চক্র সাগর পথে মালয়েশিয়া নেওয়ার জন্য মিয়ানমারে নিয়ে আটকে রেখে বিভিন্ন কৌশলে আটকে রেখেছে। ওই স্থান থেকে আটক থাকা মহেশাখালীর কালারমারছড়ার ওমর ফারুক এর পিতা- আলী হোসেনের কাছে একটি একাউন্ট নাম্বারে টাকা দেওয়ার জন্য বলা হয়। যার একাউন্ট নাম্বার ইসলামী ব্যাংক চাঁদপুর কচুয়া শাখার প্রোদায়িনা এন্টারপ্রাইজ-২০৫০৭৭৭০১০৪৬৫২৬১২।
আলী হোসেন জানান ছেলেকে বেশী নির্যাতন করায় বন্দী থাকা আরো তিন জনের পিতাসহ আমরা জনপ্রতি ১ লাখ ৪ হাজার টাকা করে এক স্লিপে ব্যাংকের ওই নাম্বারে মহেশখালী ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে গত ২০ ডিসেম্বর ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও এখনো ছেলেদের ছেড়ে দেয়নি। এখন আবার টাকা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছে।
একাউন্ট নাম্বারের সুত্র ধরে অনুসন্ধান করে ইসলামী ব্যাংক সুত্রে জানা যায়, যার একাউন্ট নাম্বার ইসলামী ব্যাংক চাঁদপুর কচুয়া শাখার প্রোদায়িনা এন্টারপ্রাইজ-২০৫০৭৭৭০১০৪৬৫২৬১২। এই প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটর সাহাদাত হোছাইন, নালোয়া বাজার সাহেদপুর, কচুয়া। সে দেশের একজন শীর্ষ মানবপাচারকারী। সে কক্সবাজারকে মানবপাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে। তাকেকেউ দেখে নাই। মানবপাচারের সব টাকাই এই একাউন্ট নাম্বারের মাধ্যমে লেনদেন হয়। মিয়ানমারে রয়েছে তার বিশাল সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ থেকে লোকজন নিয়ে মিয়ানমারে আটকে রেখে টাকা আদায় করে এই সাহাদাত হোছাইন। অনেকেই টাকা না দেওয়ায় নির্যাাতনে মৃত্যু হয়েছে এখন খবরও রয়েছে। এই চক্রের সাথে যুক্ত রয়েছে কক্সবাজারের আরো তিনজন।
এরা জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরীসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে লোকজন যোগাড় করে সাগর পথে মিয়ানমারে নিয়ে যাচ্ছে। পাসপোর্ট বিহীনদের সাগর পথেই পাচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদপুরের সাহাদাত হোছাইন ছাড়াও কক্সবাজার জেলার পাহাড়তলীর ইসলামপুর গ্রামের মৌলভী নুর হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাত্তারঘোনা গ্রামের আবদুস ছবির ছেলে হাফেজ আহম্মেদ ও রামু থানার ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মিঠাইছড়ির নিজেরপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম। এদের মধ্যে মৌলভী নুর হোসেন ও হাফেজ আহম্মদ রোহিঙ্গা। অনেক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে বসতি গেড়ে পাসপোর্ট তৈরির কাজ করে আসছে তারা। টাকা লেনদেনের একাউন্ট নাম্বারে প্রাপ্ত মোবাইল নাম্বারের সুত্র ধরে চাঁদপুরের সাহাদাত হোছাইনের সাথে যোগাযোগ করলে টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও কেন টাকা পাঠিয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবী করেন। তাঁর একজন বন্ধু ওই একাউন্টের মাধ্যমে ওই টাকা লেনদেন করেছেন। তিনি কার থেকে টাকা নিয়েছেন তা জানা নেই বলে জানান।
চাঁদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ জানিয়েছেন তিনি টাকা লেনদেনের সকল তথ্য হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মানবপাচার রোধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তথ্য পেলেই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-