কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
পঞ্চাশোর্ধ্ব মোকলেস শিকদার। স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। পাটখড়ির ব্যবসায় চলছিল সন্তানদের পড়াশোনা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় থমকে দাঁড়ায় শিকদারের জীবিকার চাকা। করেন পঙ্গুত্ববরণ। বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে উল্টো সন্তানরাই এখন তার বোঝা টানছেন। চিকিৎসায় নেওয়া ঋণ দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
শিকদার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাশগাড়ি ইউনিয়নের কানুরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রীর নাম খুরশিদা বেগম। মেয়ে শিউলি আক্তার (১৬), ছেলে রাকিব শিকদার (১৪) ও রাজিব শিকদার (১১)। একটা সময় সবাই স্কুলে যেতো। টাকার অভাবে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর দুই ভাই-বোনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। বড় ছেলের পাশাপাশি এখন ছোট ছেলেও হোটেলে কাজ করছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে মোকলেস শিকদার শিবচর থেকে পাটখড়ি কিনে একটি নছিমনে ওঠেন। কিছুদূর যেতেই নছিমনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে মোকলেসের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। অনেক চিকিৎসক দেখানোর পরও লাভ হয়নি। চিরতরে পঙ্গু হতে হয়েছে তাকে। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। এমনকি বিছানাতেই টয়লেট করতে হয়। স্ত্রী বা ছেলে-মেয়ের সহযোগিতা ছাড়া একটু নড়তেও পারেন না।
গত বছর মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল তাকে একটি হুইল চেয়ার দেন। সেই চেয়ারটি পেয়ে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু টাকার অভাবে সংসারে ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে।
মোকলেসের স্ত্রী খুরশিদা বেগম বলেন, ‘উনি পাটখড়ির বেচাকেনার ব্যবসা করতেন। ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। কিন্তু আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ড ভেঙে পঙ্গু হয়ে যান তিনি। কয়েক বছর ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে পারলেও মাঝপথে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ধার দেনা করে খেতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেঁচে থাকতে হলে পেটে তো খাবার দিতে হবে। তাই দুই ছেলেকে একটি হোটেলে কাজ করতে দিয়েছি। সেখান থেকে যে টাকা আসে তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চালাতে হয়। উনার ওষুধ কিনতে হয়, লোনের জন্য কিস্তির টাকা দিতে হয়। এছাড়া মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে। কীভাবে বিয়ে দেবো তাও জানি না।’
পঙ্গু মোকলেস শিকদার বলেন, ‘আট বছর ধরে বিছানায় শুয়ে আছি। পিঠের মধ্যে বড় বড় ঘা হয়েছে। টাকার অভাবে ঠিকমতো ওষুধ কিনে খেতে পারি না। আমার থাকার ঘরটি এমন অবস্থা হয়েছিল, তা বসবাসের উপযোগী ছিল না। তাই গত বছর বিভিন্ন সমিতি থেকে কিস্তিতে লোন করে ছোট একটি টিনের ঘর দেই। চিকিৎসার জন্য লোনও টানছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৬০ হাজার টাকার লোন নেওয়া আছে। অনেক কষ্ট হয় কিস্তির টাকা দিতে। ছোট ছোট দুটি ছেলেকে আজ পড়াশোনা বাদ দিয়ে হোটেলে কাজ করতে হচ্ছে। আমি বাবা হয়ে সব দেখছি। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। এটা আমার জন্য খুবই কষ্টের।’
প্রতিবেশী মিলন শিকদার, হাওয়া বেগম, মোকলেস ঘরামী জানান, মোকলেস শিকদার পঙ্গু হওয়ার পর থেকে খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
মাদারীপুরের আছমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ সোহেল-উজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, পঙ্গু মোকলেস শিকদারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। পিঠের মধ্যে অনেক বড় বড় ঘা হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তিনি ডাক্তার দেখাতে পারেননি। পরে আমি জানতে পেরে তাকে বিনা টাকায় ওষুধ লিখে দেই। পাশাপাশি কিছু ওষুধও কিনে দিয়েছিলাম।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আসলে একটি পরিবারের উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি যদি অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন সেই সংসারে অভাব অনাটন লেগেই থাকে। আমাদের সমাজে এমন অনেক মোকলেস আছেন। যারা সমাজে অবহেলা ও অযত্নে জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের খবর কেউ রাখে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা জাগো নিউজকে বলেন, মোকলেস যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়ে থাকেন তাহলে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এছাড়া চিকিৎসার জন্য যদি কোনো সহযোগিতার দরকার হয়, আমাদের কাছে দরখাস্ত দিলে ব্যবস্থা করবো।
জাগোনিউজ২৪
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-