কক্সবাজার প্রতিনিধি •
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় কক্সবাজার জেলায় এ বছর পাসের হার ৭৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭১০ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৭০ জন।
গতবারের চেয়ে একলাফে পাসের হার কমেছে ১১.৯৬ ভাগ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ৬০ জন ! ফলাফলের পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে কক্সবাজার জেলার ফলাফল বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরতে এই একটি তথ্যই যেন যথেষ্ট।
ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) জেলায় মোট ১১ হাজার ৪৫৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশগ্রহন করেছে ১১ হাজার ১৫২ জন। আর পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৮ হাজার ৩৫৪ জন।
পাসকৃতদের মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৬৭২ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৬৮২ জন। এবছর জেলায় ছাত্রদের পাশের হার ৭২.৩৪% এবং ছাত্রীদের পাশের হার ৭৭.০৭%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ৭১০ জন। তন্মধ্যে ছাত্র ২৫৫ জন এবং ছাত্রী ৪৫৫ জন। এ দুটি ক্ষেত্রেই গতবারের মতো ছেলেদের অনায়াসেই পেছনে ফেলেছেন মেয়েরা।
এবছর এসএসসি পরীক্ষার ন্যায় উচ্চ মাধ্যমিকেও ছেলেদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে মেয়েরা। এবছর পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে দুটোতেই ছেলেদের পেছনে ফেলেছে মেয়েরা। এছাড়া জেলায় সর্বাধিক ৪১৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে কক্সবাজার সরকারী কলেজ।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,২০২২ সালে জেলায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪৮২ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৪৩১ জন। যেখানে পাস করেছে ১ হাজার ২৫২ জন।পাশের হার ৮৭.৪৯ শতাংশ। এবছর বিজ্ঞানে ৬৮৩ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৫৫ জন এবং পাশ করেছে ৫৭৪ জন।ছেলেদের পাশের হার ৮৭.৬৩শতাংশ। আর ৭৯৯ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭৭৬ জন এবং পাশ করেছে ৬৭৮ জন। মেয়েদের পাশের হার ৮৭.৩৭%।
বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১১ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ১৪০ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ১৭১ জন।
মানবিক বিভাগ থেকে এবছর ৬ হাজার ৯৭৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬ হাজার ৭৯০ জন। যেখানে পাস করেছে ৪ হাজার ৮৮৫ জন। পাশের হার ৭১.৯৪ শতাংশ। এবছর মানবিকে ২ হাজার ৯৪০ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ হাজার ৮৬৩ জন এবং পাশ করেছে ১ হাজার ৯০৫ জন।ছেলেদের পাশের হার ৬৬.৫৪%। আর ৪ হাজার ৩৫ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ হাজার ৯২৭ জন এবং পাশ করেছে ২ হাজার ৯৮০ জন। মেয়েদের পাশের হার ৭৫.৮৮%।
মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯৫ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ৫২ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ১৪৩ জন।
বাণিজ্য বিভাগ থেকে এবছর ২ হাজার ৯৯৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ হাজার ৯৩০ জন। যেখানে পাস করেছে ২ হাজার ২১৭ জন। পাশের হার ৭৫.৬৭ শতাংশ। এবছর বাণিজ্যে ১ হাজার ৫৯১ জন ছেলের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৫৫৮ জন এবং পাশ করেছে ১ হাজার ১৯৩ জন।ছেলেদের পাশের হার ৭৬.৫৭ %। আর ১ হাজার ৪০৬ জন মেয়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৩৭২ জন এবং পাশ করেছে ১ হাজার ২৪ জন। মেয়েদের পাশের হার ৭৪.৬৪ %।
বাণিজ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৪ জন। এর মধ্যে ছেলে পেয়েছে ৬৩ জন এবং মেয়ে পেয়েছে ১৪১ জন।
এবছর জেলার অধিকাংশ কলেজের ফলাফল খারাপ হলেও প্রতিবারের মত এবারও ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছে কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এ কলেজে ১ হাজার ৭০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছে ১ হাজার ৪২ জন।পাশের হার ৯৭.৩৮%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১৬ জন।এ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছে ৩৭১ জন এবং পাশের হার ৯৯.৪৬ শতাংশ। মানবিক বিভাগ থেকে ৩৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছে ৩১৫ জন এবং পাশের হার ৯৪.৩১ শতাংশ। আর বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছে ৩৫৬ জন এবং পাশের হার ৯৮.০৭ শতাংশ। এছাড়া সাবেক সফল জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার ডিসি কলেজও ভালো ফলাফল করেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো:গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবছর ফলাফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ শিক্ষার্থীরা কলেজমূখী না হয়ে প্রাইভেট এর প্রতি ঝঁকে পড়া।এছাড়া শিক্ষার্থীরা যথাযথ ব্যক্তিদের কাছে (কলেজ শিক্ষক) প্রাইভেট না পড়ে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে স্বরনাপন্ন হয়েই খারাপ ফলাফল করেছে।
এর আগে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে শেখ হাসিনা এ ফল ঘোষণার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স) ২০২২ এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। এই সংখ্যার মধ্যে ছেলেদের পাসের হার ৮৪.৫৩ এবং মেয়েদের পাসের হার ৮৭.৮৪। ফলে পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে আছে এবারের ফলাফলে।
অন্যদিকে এবার মোট জিপিএ-৫ পাওয়ার ছেলেদের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৬১ জন এবং জিপিএ-৫ পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা ৯৫ হাজার ৭২১ জন। এতে জিপিএ-৫ এ মেয়েদের সংখ্যা বেশি।এ দিকে গত বছর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-