ইমরান আল মাহমুদ:
বনের উপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে এবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় সুফল প্রকল্পের সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৮শ জন উপকারভোগীদের মাঝে জীবিকায়ন তহবিল বিতরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার(২৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে তহবিল বিতরণ পূর্ববর্তী অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব। প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নেকমের সিবিএইচআইডি ও গভর্নেন্স ম্যানেজার আফরোজা খাতুন।
এদিকে নগদ অর্থ পাওয়া থাইংখালী তেলখোলা এলাকার পাইনচিং চাকমা ও লাচাও চাকমা বলেন,”আমরা বনের ভেতর থেকে কাঠ এনে ও বন্যপ্রাণী শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। বনবিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের জীবিকার জন্য নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। এসব অর্থ দিয়ে আমরা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরা তৈরি করবো। বন রক্ষার জন্য সবাইকে বলবো এবং আমরা নিজেরাও বনের পরিবেশ ধ্বংস করবোনা।”
কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন,বনে যারা কাঠ কাটতো তারা যাতে নিজেদের জীবিকার উন্নয়ন করতে পারে সেজন্য এ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। সঠিকভাবে এ টাকা কাজে লাগালে জীবিকার মান উন্নয়ন হবে। বিতরণকৃত অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হবে। বন পাহারাদলকে প্রতি ডিউটির জন্য ৫০০টাকা করে দেওয়া হবে। এটা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার বনের সাথে সম্পৃক্তদের জীবিকার উন্নয়নে প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ, রাজারকুল রেঞ্জ ও হোয়াইক্যং রেঞ্জের মোট উপকারভোগী ৯শ ৪৯জন,প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দকৃত সদস্য ৭শ ৭৮ জন। তাদের জনপ্রতি ৪২হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে ১ম পর্যায়ে ৬০শতাংশ নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ উখিয়া রেঞ্জের মোছারখোলা বিট,থাইংখালী বিট,উখিয়া সদর বিট,দোছড়ি বিট,ভালুকিয়া বিট,পাগলিরবিল বিট ও মনখালী বিটের উপকারভোগীদের মাঝে প্রদান করা হয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন,উখিয়া তে বন ধ্বংস হতে হতে যেটুকু ছিলো তাও রোহিঙ্গা ঢলের পর তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে চলে গেছে। বর্তমানে সুফল সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে বনরক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বন নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জীবিকার উন্নয়নের জন্য ১কোটি ৯৮লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এ অর্থ দিয়ে তারা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করবে বলে প্রত্যাশা।
তহবিল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন,বন ও বনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তার মধ্যে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মনিটরিং ব্যবস্থায় রেখে পরিবারগুলোর সদস্যদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করার চেষ্টা। বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ,মৌজা-বনে বসতি ও জুম চাষ নিষিদ্ধ করা এবং প্রত্যন্ত এলাকার পরিবারগুলোর আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব বলেন,”বর্তমান বিশ্বের একটি সমস্যা দিন দিন বাড়ছে সেটা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। যার ফলে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে অনেক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি আমাদের উখিয়ার ইনানীর মেরিন ড্রাইভ সড়কে পর্যন্ত সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে। এভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করার পেছনে মানুষই দায়ী। পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ সহ পাহাড় কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। জীবিকায়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে বনরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট(নেকম) এর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান,
নেকমের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডা. মো. শফিকুর রহমান,উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. বদরুল আলম, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও রাজাপালং ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন,উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আইয়ুব আলী, বিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান,রামকৃষ্ণ ঘোষ, দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকার ইমরান আল মাহমুদ সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-