মনতোষ বেদজ্ঞ •
পর্যটন নগরী কক্সবাজারে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টেরই নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট বা এসটিপি। এতে হাজার হাজার টন বর্জ্যে দিনের পর দিন দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে পরিবেশ। সেইসঙ্গে দূষিত হচ্ছে সমুদ্র। কেন্দ্রীয় এসটিপি স্থাপনে হোটেল মালিকরা সরকারি উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই কোন সমাধান।
পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। যেখানে গত কয়েক দশকে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক গড়ে উঠে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। যার বেশিরভাগই সৈকতের কাছাকাছি।
প্রতি বছর শহরটিতে প্রায় ২০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়। যাদের অধিকাংশই ভিড় জমান পর্যটন মৌসুমে। সে সময় হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে সৃষ্টি হয় হাজার হাজার টন তরল বর্জ্য। কোন পরিশোধন ছাড়াই খাল-নালা হয়ে এসব বর্জ্য গিয়ে পড়ছে সাগরে। এতে যেমন হুমকির মুখে পরিবেশ, তেমনি পর্যটন খাতও ধ্বংসের মুখে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘এসটিপি না থাকায় এখানে মলমুত্র সব রাস্তার নালায় যাচ্ছে। এর ফলে দুর্গন্ধের শহরে পরিণত হচ্ছে কক্সবাজার।’
পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট থাকলেও জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে মাত্র চারটিতে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, এসটিপি আছে ১০টিতে। বাকি সব স্থাপনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর নুরুল আবছার বলেন, ‘এখন থেকেই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে এক সময় এর প্রভাব পড়বে সমুদ্র দুষণে। এর ফলে আমরা যেমন একটা সুন্দর শহরও গড়তে পারবো না, আবার পর্যটনকেও প্রমোট করতে পারবো না।’
পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষায় ভবিষ্যতে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদনে এসটিপি বাধ্যতামূলক করা হবে বলেও জানান তিনি।
এসটিপি স্থাপনের জন্য হোটেল মালিকরা সরকারিভাবে জায়গা বরাদ্দের দাবি জানালেও স্থানীয় প্রশাসনের উল্টো সুর। তারা বলছে, হোটেল মালিকরা জায়গার সংস্থান করতে পারলে দেয়া হবে সরকারি সহায়তা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন যেখানে এসটিপি করতে বলবে আমার সেখানেই করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাদের জন্য সরকারিভাবে জায়গা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু আমরা এখনো ওই অঞ্চলে সেরকম জায়গা পাই নি। তবে সকল হোটেল মালিকরা যদি এক সঙ্গে উদ্যোগ নিয়ে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এসটিপি করে তাহলে সরকার তাদের সহযোগীতা করবে।’
এসটিপি স্থাপনের প্রশ্নে নিরব দর্শকের ভূমিকায় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। হোটেলগুলোকে এসটিপি স্থাপনে চিঠি দেওয়ার কথা মৌখিকভাবে জানালেও এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-