বান্দরবান প্রতিনিধি •
পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আরও ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাতে জেলার রোয়াংড়ছড়ি ও থানচি উপজেলা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন নিজামুদ্দিন হিরন ওরফে ইউসুফ (৩০) সালেহ আহমেদ ওরফে সাইহা (২৭), মো. সাদিকুর রহমান সুমন ওরফে ফারকুন (৩০), মো. বাইজিদ ইসলাম ওরফে মুয়াজ ওরফে বাইরু (২১) ও ইমরান বিন রহমান শিথিল ওরফে বিল্লাল (১৭)।
এদের মধ্যে ইমরান কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ তরুণের একজন এবং সাদিকুর রহমান সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া ৪ তরুণের একজন। নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় এদের সবার নাম রয়েছে।
গ্রেফতার যুবকরা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দুর্গম গহিন জঙ্গলে আসে। কেএনএফ তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে এসব জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। এ পর্যন্ত কেএনএফ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ৫০ জনেরও বেশি সদস্যকে দুর্গম পাহাড়ের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পরে গত ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর রাঙামাটির বিলাই ছড়ির সাইজাম পাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব জঙ্গি সংগঠনের ৭ সদস্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন (কেএনএফ) এর ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
এরপর তাদের থেকে তথ্য নিয়ে সেনাবাহিনী পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করলে জঙ্গিরা আস্তানা পরিবর্তন করতে থাকে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের আস্তানা শনাক্ত করে বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাতে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ৫ সদস্যকে আটক করে র্যাব।
গ্রেফতার ৫ জনের মধ্যে নিজাম উদ্দিন হিরন ২০১৯ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে জহির নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। সালেহ আহমেদ কুমিল্লার একটি নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। পাহাড়ে অবস্থানরত অপর এক জঙ্গির মাধ্যমে তিনি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হন। সাদিকুর রহমান সিলেটের একটি জিমের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের মাধ্যমে তিনি এ জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়। এরা সবাই ২০২১ সালে প্রশিক্ষণ নিতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে আসেন।
এ ছাড়াও গ্রেফতার বাইজিদ ইসলাম ২০১৯ সালে সংগঠনটির আমির আনিছের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে আসেন। তবে সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ নিতে পাহাড়ে আসেন ইমরান বিন রহমান।
এ অভিযানের মাধ্যমে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পাহাড়ে অভিযান চলমান। জঙ্গিদের অনেকে এখনো দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযান পরিচালনা করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তবে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ পাহাড়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান শুরু করেন এবং অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করতে গত ১৮ অক্টোবর থেকে বান্দরবানের রুমা রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-