পিনাকি দাসগুপ্ত •
রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন শুরু হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে গৌরবের আরেক মাইলফলক। অবশেষে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। মেট্রোরেলের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (এমআরটি-৬) লাইনের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যোগাযোগ প্রকল্প। তিন ধাপে ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে কমলাপুর পর্যন্ত সম্পূর্ণ মেট্রোরেল। নারীচালক দিয়ে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা করার পরিকল্পনা করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিএল)। যাদের মধ্যে মরিয়ম আফিজা উদ্বোধনী দিনই চালকের আসনে বসছেন। মেট্রোরেলের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পুরো মেট্রোরেল পথ এলাকা সাজ সাজ রব। জোরদার করা হয়েছে কঠিন নিরাপত্তা। এরই মধ্যে মেট্রোরেল পথের চারপাশের বাসিন্দাদের সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যা বাস্তবায়ন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেক করা হচ্ছে। বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির অপারেশন্স শাখার যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সড়কপথে উত্তরা দিয়াবাড়ী মেট্রোরেল উদ্বোধনস্থলে পৌঁছাবেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি যখন উত্তরা স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও আসবেন ঠিক সেই সময় মেট্রোরেলের নিচের সড়কও বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী উত্তরা থেকে এসে আগারগাঁও স্টেশন ত্যাগ না করা পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচের সড়কে চলাচল বন্ধ থাকবে।
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এই পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। যানজটের নগরী ঢাকায় বাস কিংবা অন্য যানবাহনের চেয়ে এত দ্রুত যাতায়াত ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে। শুরুতে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও থামবে না।
উদ্বোধন : আজ সকাল ১১টায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে উদ্বোধনীস্থলে উপস্থিত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনে চড়ে আগারগাঁও স্টেশনে ভ্রমণ করবেন। সমাবেশস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা উত্তর স্টেশনে আসবেন। সেখান থেকে মেট্রোরেল ছাড়বে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী সেখানে মূল ফলক পরিদর্শন এবং স্টেশন প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপণ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী কার্ড কিনে ভাড়া পরিশোধ করে প্ল্যাটফরমে যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষমাণ ট্রেনে সবুজ পতাকা নেড়ে চলাচলের সংকেত দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে আসবেন। উদ্বোধনী যাত্রায় মেট্রোরেলে প্রায় ২০০ অতিথি থাকতে পারেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকেই মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে।
আধুনিক প্রযুক্তির তৈরি মেট্রোরেলে পুরুষ চালকদের সঙ্গে অন্তত ছয় জন নারী চালক এই ট্রেন চালাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক। তিনি জানান, সবগুলো ট্রেন চালানোর জন্য পর্যাপ্ত চালক নিয়োগ করা হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথে যেখানে লাইন সোজা, সেখানে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল। আর যেখানে কিছুটা বাঁক রয়েছে, সেখানে কিছুটা কম গতিতে চলবে।
যানজটে নাকাল নগরীতে মুক্তির আনন্দ দেবে মেট্রোরেল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল চালু হলেও এখনি যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না। তবে এটুকু পথ যে দ্রুতগতিতে আসতে পারছেন তাতেই আপাতত খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, যানজটে নাকাল থাকা নগরীতে কিছুটা হলে স্বস্তি দেবে মেট্রোরেল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পুরো চাপ রাজধানীতে নিতে না হলেও বাংলাদেশের পুরো চাপ ঢাকাকেই বহন করতে হচ্ছে। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। নামিদামি স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, আদালত সবকিছু ঢাকাতে থাকায় প্রতিনিয়ত জীবিকার তাগিদে শত শত মানুষ ঢাকামুখী হন। এ কারণে সঠিক নগর ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু তার বাস্তবায়ন তো হয়নি বরং দিনকে দিন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ঢাকার রাস্তা হয়ে গেছে সংকুচিত। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। অন্যদিকে কমে গেছে গণপরিবহন। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাজধানীতে নানা পরিকল্পনা নেয় সরকার। সেই পরিকল্পনার এক বিশেষ সংযোজন ছিল মেট্রোরেল। মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। এরপর গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ শুরু করে।
উল্লেখ্য, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-