হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া •
সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে আনা বিদেশি মিয়ানমারের সিগারেটে উখিয়ার বাজার সয়লাব। প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে দোকানে এ সব অবৈধ পথে আনা সিগারেট বন্ধে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা লক্ষণীয়।
আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বিদেশি মিয়ানমারের সিগারেট বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে কাস্টমসের সংশ্লিষ্টদের অভিমত। একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পথ দিয়ে বিদেশি মিয়ানমারের বিভিন্ন ভ্রান্ডের সিগারেট এ দেশে নিয়ে আসছে।
এতে স্থানীয় চোরাকারবারিদের সাথে রোহিঙ্গারাও জড়িত রয়েছে। সিগারেট, মদ, ইয়াবাসহ অন্যান্য চোরাইপণ্য এনে কৌশলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মজুদ রাখা হয়। সেখান থেকে সময় সুযোগ বুঝে উখিয়া ও কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পর্যটন মৌসুম তাই কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে ইয়াবা ও মদের চাহিদা রয়েছে। সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি উখিয়া সদর ষ্টেশন, কোটবাজার, মরিচ্যা বাজার, সোনারপাড়া বাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কুতুপালং বাজার, বালুখালী পানবাজার এবং থাইংখালী ষ্টেশনের বিভিন্ন দোকানে অন্যান্য পণ্যের আড়ালে মিয়ানমারের সিগারেট বেচা-বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।
সীমান্ত এলাকার মানুষদের সাথে রোহিঙ্গাদের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে বিদেশি সিগারেটসহ অন্যান্য পণ্য আদান প্রদান হয়ে থাকে। একে অপরের বিশ্বাসের সাথে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, সিগারেট ও স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত চোরাচালান করে আসছে। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব অবৈধ পণ্য উদ্ধার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে রাঘব বোয়ালরা। মিয়ানমারের সিগারেট ধুমপায়ীদের মাঝে অগ্রাধিকার পেতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, মিয়ানমারের সিগারেটের রেটও ভালো খেতেও তৃপ্তি পাওয়া যায়। মিয়ানমারের সিগারেটে একেকটি টানে অন্যরকম এক অনুভূতি। না খেলে সেটা বুঝা যাবে না।
মিয়ানমারের সিগারেট প্রধানত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং তার আশপাশের উখিয়ার বিভিন্ন হাট-বাজারের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। আরেক ধুমপায়ী তার অভিঞ্জতা বর্ণনা করতে গিয়ে জানান, সীমান্ত পথে আসা মিয়ানমারের সিগারেট এনে উখিয়ার বিভিন্ন পানের দোকানে বিক্রি করি।আমারও প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ প্যাকেট লাগে। পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের সিগারেটে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।
জানা যায়, বিদেশি সিগারেটের শতকরা ৯০ ভাগ অবৈধভাবে আনা হয়ে থাকে।
সামাজিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের সাবেক সভাপতি নুরুল কবির মাহমুদ জানান, ধুমপান ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অনেকে ইতিমধ্যে মারা গেছেন। তা আমরা জানি। এরপরও মানুষের অসচেতনতার কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ধুমপায়ীদের সংখ্যা। অনেক শিক্ষিতজনদের দেখি প্রকাশ্যে ধুমপান করতে। ধুমপান বিষয়ে আইন থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই।
আইন-শৃঙখলা বাহিনী পুলিশের অনেক সদস্যকে দেখি দোকান থেকে সিগারেট কিনে তা পান করছে প্রকাশ্যে। পুলিশ যদি প্রকাশ্যে ধুমপান করে তাহলে সাধারণ জনগণও প্রকাশ্যে টানবে এটাই স্বাভাবিক। দেশে এমন অনেক আইন আছে যা প্রয়োগ নেই।
আজকে যে সিগারেটে আসক্ত সে ধীরে ধীরে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়বে। এতে পারিবারিক কলহ ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় কর্মরত এনজিওকর্মী ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও প্রকাশ্যে ধুমপান করতে দেখা যায়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-