নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া •
উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব ওয়ানগালা নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে।
রোববার (২১ নভেম্বর) উখিয়ায় বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরতদের নিয়ে খ্রিস্ট রাজার মহাপর্ব দিনে কক্সবাজার আচিক কমিউনিটির আয়োজনে ওয়ার্ল্ড ভিশন হলরুমে দিনব্যাপি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়ানগালা অনুষ্টানের নকমা প্রধান লোটাস চিসিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উখিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন্নেছা বেবী।
অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক ছিলেন উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি দে সহ আরও অনেক আমন্ত্রিত অতিথি।
অনুষ্ঠানের নকমা প্রধান লোটাস চিসিম জানান, সুপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।
উক্ত অনুষ্ঠানে পরবর্তী বছরের জন্যও একজন নকমা নির্বাচন করা হয়। পরিশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র লটারি এর মাধ্যমে উক্ত ওয়ানগালা উৎসবের শুভ সমাপ্তি হয়।
- ওয়ানগালা
গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্যে। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। আবার ওয়ানগালা উৎসব একশ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে, তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে শস্যদেবতার প্রতি।
গারো সম্প্রদায়ের এটাই চল। তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে।
ওয়ানগালা উৎসব একশ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত। সাধারণত দুইদিন ধরে উৎসব চলে। কখনও কখনও এক সপ্তাহ ধরেও এটি চলতে পারে। উৎসবের প্রথম দিনে গোত্রপ্রধানের ঘরে রাগুলা নামের অনুষ্ঠান পালিত হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন কাক্কাত নামে পরিচিত। এই দিন ছোট বড় সবাই রঙবেরঙের পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতি ঢোলের তালে তালে নাচে।
এই দিন হল বিনোদনের দিন। সারা গারো পাহাড় ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে। পুরুষ ও নারীরা দুইটি আলাদা সারি গঠন করে এবং নাচের তালে তালে এগিয়ে যান। সাথে থাকে মহিষের শিঙে বানানো এক ধরনের আদিম বাঁশির সুর।
ওয়াংগালা উৎসব মেঘালয় ও বাংলাদেশের গারোদের সংস্কৃতির সংরক্ষণে ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।এটা জনপ্রীয় একটি উৎসব।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-