৫ বছর পর কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক •

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর পর এক দিনের সফরে কক্সবাজার আসছেন। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) মেরিনড্রাইভের উখিয়ার ইনানীতে আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া পরিদর্শন শেষে অংশ নেবেন সৈকতের লাবণী পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য দলীয় জনসভায়।

প্রধান অতিথি হিসেবে জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার আগে কক্সবাজারে চলমান কর্মযজ্ঞের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া ২৮টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া চারটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করবেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তুলতে ১০টি মেগা প্রকল্পসহ ছোটবড় ৭২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, লিংকরোড় থেকে হলিডে মোড় সড়ক এবং মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ডে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছে জনগণ। চলমান প্রকল্প থেকে ২৮টি শেষ হয়েছে। সমাপ্ত হওয়া এসব প্রকল্প ৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এক হাজার ৩৮২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সমাপ্তের পর উদ্বোধনের তালিকায় থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে আছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামুতে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কক্সবাজারে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম উন্নয়ন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কুতুবদিয়ায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ও বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ এবং কলাতলী উদ্যান নির্মাণ।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতায় জোয়ারিনালা শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ও উখিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ৩ তলা বিশিষ্ট আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন নির্মাণ।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্সবাজার টেকনাফস্থ শাহপরীর দ্বীপে হোল্ডার নং-৬৮ এর সি-ডাইক অংশের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ণ।

স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলাধীন কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাকঁখালী নদীর উপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ, নবনির্মিত ৬ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, রামু উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ, উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, বিমান বন্দর হতে নুনিয়ারছড়া সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, শহীদ সরণী সড়ক এবং ৩টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, সদর থানা হতে খুরুশকুল পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ, সুগন্ধা পয়েন্ট হতে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ এবং কক্সবাজার প্রধান সড়ক হতে খরুশকুল রোড হয়ে তারাবনিয়ারছড়া পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প শেষ হয়েছে।

পাশাপাশি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এলজিইডির আওতায় কুতুবদিয়ার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কের ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি এবং আকবর বলি ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি ও মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নতির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর তীরের ৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮ পোল্ডার পুনর্মেরামত প্রকল্প।

এদিকে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে মন্তব্য করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, ২০১৭ সালে কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিশ্রুতি মতে কক্সবাজারে গত ১৪ বছরে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ২৮টি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন আছে আরও প্রায় ৪৫টি প্রকল্প।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জনসভাস্থলের পাশে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন দলের নেতারা বলেন, বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন করে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সংযুক্তি, কক্সবাজারের সঙ্গে মহেশখালী উপজেলার সংযোগ সেতু ও বাঁকখালী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের দাবি জানানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিই আলাদা। তাই ক্ষমতায় আসার পর বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছেন এখানে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লাভবান হবে জাতীয় অর্থনীতি।

আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ২০১৭ সালে একই মাঠে কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিশ্রুতির সিংহভাগ কাজই এখন শেষ পর্যায়ে।

আরও খবর