বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর মরদেহ কলকাতায় উদ্ধার

অনলাইন ডেস্ক •

বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর-উর লতিফ নবি ওরফে সরওয়ার ম্যাক্সনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন ম্যাক্সন। তার সঙ্গে অর্পিতা হাজরা (৩২) নামে এক নারী থাকতেন। ম্যাক্সনের দেহ দক্ষিণ কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েই তিনি পালিয়ে যান। এরপর থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হাসপাতালে দেওয়া ঠিকানাতেও সন্ধান মেলেনি তার। তবে ঘটনাটি খুন না আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত করে জানাতে পারিনি পুলিশ। কোনো অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।

কলকাতার হরিদেবপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত দশটা দশ মিনিটে হরিদেবপুর থানার মোতিলাল গুপ্ত রোডের একটি বহুতল বাসা থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর আসে। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে ওই বহুতল ভবনের এক ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করে বাড়ির তিন তলায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর জানায়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ সময় মৃতদেহের গলায় লাল ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছিল। ওড়নার বাকি অংশ ঘরের সিলিং ফ্যানে বাধা ছিল। পরে পুলিশ জানতে পারে আত্মহত্যা করা ব্যক্তি তমালই বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর-উর লতিফ নবি ওরফে সরওয়ার ম্যাক্সন।

হরিদেবপুর থানা সূত্রে আরও জানা যায়, তিনি কলকাতায় যে নারীর সঙ্গে থাকতেন তিনি রিলায়েন্স বাজার মার্ট নামে একটি শপিংমলে চাকরি করেন। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সে ওই শপিংমল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে সে হরিদেবপুরের ওই বহুতল ভবনে যায়। এরপর বাইরে থেকে ঘরের দরজা নক করতে থাকে। ভেতর থেকে কোন শব্দ না মেলায় স্থানীয়দের ডেকে আনেন অর্পিতা। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় ওই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই সরওয়ার ম্যাক্সনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপার ডা. শিশির নস্কর জানান, রাতেই তাকে হরিদেবপুর থানা পুলিশ মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, মাদকাসক্ত ম্যাক্সন বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল। সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না ওই নারীর সঙ্গেও। তাই খুন না আত্মহত্যা সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হাতে এলেই সব জানা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডানলপ থেকে ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তমাল চৌধুরী পরিচয় দিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়েছিল সে। বছর দেড়েক ধরে ডানলপের নর্দান পার্ক এলাকায় এক মহিলার সঙ্গে থাকছিল ম্যাক্সন। তার বিরুদ্ধে ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট, জালিয়াতি, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের মামলা ছিল। তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে আদালতে। এরপর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বারাকপুর আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায় ম্যাক্সন। জামিন পেয়েই গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি।

ম্যাক্সন যে ধরা পড়েছিল, সেই খবর আগেই সিআইডির তরফে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশকে। এদিন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা এড়িয়ে যান।

ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি সূত্রে জানানো হয়, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এখনও সক্রিয় রয়েছে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তার গ্রুপের সদস্যরা চট্টগ্রামে টাকা তুলতো পরে সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় পাঠাত।

বাংলাদেশের পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাসহ মোট ২৪টি মামলা রয়েছে তার নামে। সে কারণেই তাকে জেরা করার উদ্যোগ নেয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। কিন্তু বাংলাদেশের তদন্তকারী দল কলকাতায় পৌঁছানোর আগেই অস্বাভাবিকভাবে জামিন পেয়ে যায় ম্যাক্সন।

২০২১ সালে লকডাউনের সময় কলকাতায় আসে ম্যাক্সন। নাম বদলে হয়ে যায় তমাল চৌধুরী। থাকছিল কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায়। পরে নিউ মার্কেট এলাকায় মাছের ব্যবসাও শুরু করেন। এ সময় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর এলাকার এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার সঙ্গেই ৬ হাজার রুপিতে নির্থানপার্কে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকতেন ম্যাক্সন।

আরও খবর