রোহিঙ্গা শিবিরে এতো খুনোখুনির কি কারণ!

বিডি প্রতিদিন •

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত সাড়ে পাঁচ বছরে খুন হয়েছেন কমপক্ষে ১২৫ জন। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য- এ ক্যাম্প এখন পরিণত হয়েছে ‘যমপুরী’তে। আধিপত্য বিস্তার, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণসহ ২৫ কারণে স্বজাতি নিধনে মেতেছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরই একটি অংশ। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

এ মৃত্যুর মিছিলের রাশ টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনকে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীগত আক্রোশ, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে চলে যাওয়ার জের, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব খুন হয়েছে। এর সঙ্গে বেকারত্ব, হতাশা তো রয়েছেই। ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ চলছে।

সাবেক কূটনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘাত-খুনোখুনির অসংখ্য কারণ রয়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে রোহিঙ্গারা উগ্রজাতি।

তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাম্প সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ’ কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমপক্ষে ১২৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

গত এক সপ্তাহেই খুন হয়েছেন ছয়জন। এসব খুনের কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার এবং আর্থিক লেনদেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৩২ ক্যাম্পের কোথাও না কোথাও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এর জের ধরে খুনের ঘটনাও ঘটছে।

এ সংঘাতের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে চলে যাওয়ার জের, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, আর্থিক লেনদেন, প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার উসকানি, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ক্যাম্পে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব, শিক্ষার অভাব, যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, বেকারত্ব, মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মানব পাচার নিয়ে দ্বন্দ্ব, অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ধর্ষণ, জঙ্গি সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে টার্গেট কিলিং, খুনের বদলা, বাদী হয়ে মামলা দায়ের, মামলার সাক্ষী হওয়া, বাংলাদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহায়তা করা, নিজেকে জাহির করার চেষ্টা এবং তর্কাতর্কির জের।

প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা রোহিঙ্গা নাগরিক সিরাজুল হক আবরার বলেন, ‘তিন দশকে রোহিঙ্গাদের অনেকে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের হানাহানির রেকর্ড ছিল না। অথচ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী রোহিঙ্গারা আসার পর থেকেই ক্যাম্পগুলো সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক্যাম্পগুলো এখন সাধারণ রোহিঙ্গাদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ’

রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা ছিল। ক্যাম্পগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখের বেশি। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘অপারেশন রুট আউট’ নামে অভিযান শুরু করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

তিন দিন ধরে চলা এ অভিযানে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানান অপরাধে একেক জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘অপারেশন রুট আউট’ শুরু করা হয়েছে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্যাম্পের মধ্যে টহল জোরদার করা হয়েছে।

আরও খবর