ডেস্ক রিপোর্ট •
রোহিঙ্গা নাগরিকদের মাধ্যমে নৌপথে মিয়ানমার থেকে আনতেন ইয়াবা। ঢাকার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কখনো মাছের চালানের সঙ্গে ট্রাকে, কখনো বাসে পাঠাতেন ইয়াবা। তবে অধিকাংশ সময় নিজে প্লেনে উড়ে এসে ঢাকায় সেই ইয়াবা রিসিভ করতেন। নিজেই ঢাকার ডিলারদের সঙ্গে করতেন লেনদেন।
অথচ এলাকায় ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়ার ইয়াবা কারবারের গডফাদার এরশাদুল হক (৩২)। পৈত্রিক সূত্রে রয়েছে মাছের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে গত তিন বছর ধরে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের সঙ্গে এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ করে কারবার করছেন এরশাদুল হক।
গত এক মাস আগে এরশাদুলের সম্পর্কে তথ্য পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ৩৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ এরশাদুল হককে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো উত্তরের একটি দল। গ্রেপ্তার এরশাদুল কক্সবাজার সদরের নুরুল হকের ছেলে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসি ঢাকা মেট্রো(উত্তর) উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান।
- যেভাবে গ্রেপ্তার হয় এরশাদ
রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রায় এক মাস আগে এরশাদুলের ইয়াবা সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে পারি। এরশাদুলের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির জন্য আমরা সোর্স নিয়োগ করি। গত ২৪ অক্টোবর রমনা সার্কেলের পরিদর্শক তমিজ উদ্দিন মৃধা ক্রেতা সেজে দুই হাজার পিস ইয়াবা কেনার দেন-দরবার করার সময় এ চক্রের সহযোগী সদস্য হুমায়নকে তার স্ত্রীসহ ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। হুমায়ন ও তার স্ত্রীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এরশাদুলের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ন জানায়, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার ইয়াবার মূল গডফাদার এরশাদুল। তিনি ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করবে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে এরশাদুলকে ৩৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার এরশাদুল হক একটি সরকারি কলেজ থেকে বিবিএ করেছেন। তিনি নিজেকে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট টিমের সাবেক ক্যাপ্টেন বলে দাবি করেছেন।
এরশাদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উখিয়ায় তাদের একাধিক মাছের প্রজেক্ট রয়েছে। এই মাছের প্রজেক্টের আড়ালে তিনি ইয়াবার ব্যবসা করতেন।
- ব্যবসার কৌশল
গ্রেপ্তার এরশাদুল মাছ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের মধ্যে বিশেষ কায়দায় ম্যাগনেট ব্যবহার করে ঢাকায় ইয়াবার বড় চালান নিয়ে আসতেন। এ কাজে তার একাধিক সহযোগী সদস্য রয়েছে। তবে সে এ সিন্ডিকেটের প্রধান।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদুজ্জামান বলেন, এরশাদুল সরাসরি মিয়ানমারের ইয়াবার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
নৌপথে অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সহায়তায় ইয়াবার চালান আনতেন টেকনাফে। এরপর তা তিনি নির্ভরযোগ্য সোর্স ও বাহকের মাধমে ঢাকায় পাঠাতেন কখনো বাসে কখনো ট্রাকে। তিনি নিজে কখনো ইয়াবা বহন করতেন না।
ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠিয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে নিজে ঢাকায় যাতায়াত করতেন প্লেনে। ঢাকা ও মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করতেন। তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জব্দ চালানের আগেও একাধিকবার ইয়াবার বড় চালান ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করেছেন। নিজে করতেন লেনদেন।
- ৮০ টাকায় পিস কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন ৩০০ টাকা
পাইকারিতে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা সংগ্রহ করতেন এরশাদুল। তিনি পিস প্রতি ৮০ টাকায় কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। নৌপথে ইয়াবার চালান আনার ক্ষেত্রে তিনি একাধিক রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করতেন। এরশাদুলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-