চকরিয়া প্রতিনিধি •
মিনহাজ উদ্দিন (১৫)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বায়না পূরণ করে বাবা মোহাম্মদ ফোরকান একটি মোবাইল কিনে দিয়ে। আর সেই ফোন সেটই কাল হলো মিনহাজের। নিভে গেলো তার প্রাণ প্রদীপ। তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে অল্পদিনে সখ্যতা (বন্ধুত্ব) গড়ে উঠা আশরাফ উদ্দিন ছোটন (১৯)। তাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিখোঁজের ২৪ দিন পর ১৫ বছরের শিশু মিনহাজের পচনধরা গলিত লাশ উদ্ধার হয় ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে।
এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হয় বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের ছোট বমুর আবু তাহেরের ছেলে আশরাফ উদ্দিন ছোটন।
নিহত মিনহাজ উদ্দিন লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের তেশলঝিরি গ্রামের মোহাম্মদ ফোরকানে ছেলে।
মিনহাজ ছোট বমু গ্রামের মনছুরের মাছের খামারে ৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করতো। ছোটন মাঝেমধ্যে ওই খামারে দিনমজুরে কাজ করতো। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। ছোটন মাঝেমধ্যে মিনহাজের সাথে খামারে রাতেও থাকতো এবং কয়েকবার মিনহাজের বাড়িতে বেড়াতেও যায়।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে গলিত লাশ পাওয়ার পর হত্যা রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে টানা অভিযান শুরু করেন চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ চন্দন কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের পুলিশ টিম। তার ফলও মেলে দু’দিনের মধ্যে। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক ছেলে অস্বাভাবিক কথা বলায় পুলিশে খবর দেয় লোকজন। সাথে সাথে পুলিশ গিয়ে গ্রেপ্তার করে আশরাফ উদ্দিন ছোটনকে। তার দেখানো স্থান থেকে উদ্ধার হয় হত্যায় ব্যবহৃত দা, গর্ত খোড়া কোদাল, চুরি করা মোবাইল সেট, চার্জার ও গান শোনা একটি সাউন্ড বক্স।
গ্রেপ্তারের পর আশরাফ উদ্দিন ছোটন বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশের কাছে এবং বিকাল ৫ টায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাকিম (বিচারক) জাহিদ হোসেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক (১৬৪ ধারায়) জবানবন্দী দিয়েছে।
আশরাফ উদ্দিন ছোটন স্বীকারোক্তিতে বলেন, ‘৩ সেপ্টেম্বর রাতে খামারে রাতে একসাথে থাকি আমরা। ওই রাতে মিনহাজ ঘুমিয়ে পড়লে তার মোবাইলের প্রতি লোভ পড়ে আমার। মোবাইলটি সরিয়ে রেখে স্বয়নকক্ষের টিন ছিদ্র করে রাখি। যাতে মিনহাজ মনে করে তার ফোন সেটটি চোরে নিয়ে গেছে। কিন্তু সে আমাকেই সন্দেহ করে বারবার ফোন ফেরত চায়। পরদিন সকালেও ফেরত চেয়ে না পেয়ে দা-কোদাল নিয়ে চারা গাছ রোপণ করতে খামারের বাগানে চলে যায়। আমি সেখানে গিয়ে আবারও জানতে চাই, ‘মোবাইল চুরি নিয়ে আমাকে এখনো সন্দেহ করো কিনা।’
এতেও মিনহাজ বলে, ‘আমার সাথে একমাত্র তুমি ছিলে, তাই তুমিই চুরি করেছ।’ একথা বলার সাথে সাথে দা-কোদাল কেড়ে নিই। দা দিয়ে মিনহাজের ঘাড়ে কোপ মারি। এতে সে মাটিতে লুটে পড়ে। সে নিথর হয়ে পড়লেও মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায়ও কোপ মারি। মারা যাওয়ার পর তারই কোদাল দিয়ে গর্ত খুড়ে পুতে ফেলি মিনহাজকে।’
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছে আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই বক্তব্যে পুনরাবৃত্তি করেছে আশরাফ উদ্দিন ছোটন। সন্ধ্যায় তাকে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-