ইলিশের বাজার চড়া
কক্সবাজার প্রতিনিধি •
এবার কক্সবাজারের ইলিশ যাচ্ছে কোলকাতার পূজায়! দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকেই ইলিশ আমদানি করছেন। আর এর ফলে কক্সবাজারে ইলিশের বাজার এখন বেশ চড়া।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ফিশারীঘাটে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রায় ১২শ-১৩শ টাকা কেজি দরে, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা দরে এবং ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজারে ইলিশের বাজার বেশ চড়া। প্রতিটি সাইজের ইলিশেরই আগের তুলনায় কেজি প্রতি ২শ থেকে ৩শ টাকা হারে দাম বেড়েছে।
তিনি জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজারের ইলিশ যাচ্ছে ঢাকা হয়ে কোলকাতা। আজ বৃহস্পতিবারও ফিশারীঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে ছোট-বড় চারটি ট্রাকে প্রায় ২৬ মেট্রিক টন ইলিশ। সেখান থেকে বাছাই করে বড় ইলিশগুলো কোলকাতায় পাঠানো হয়। আর ছোট ইলিশগুলো বিক্রি করা হয় রাজধানীর বাজারে।
তবে আগের দিনের তুলনায় আজ সাগর থেকে কম ইলিশ এসেছে বলে জানায় কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্র।
সূত্রমতে, গতকাল বুধবার এই অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৬ টন ইলিশ ঢাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটস্থ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপক মো. এহসানুল হক বলেন, “ট্রলারগুলো সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফেরার ওপর ভিত্তি করে মাছের গড় পরিমাণে বেশ হেরফের হয়। তবে ইলিশের বাজার চড়া থাকায় আগামী কয়েকদিন বেশি সংখ্যায় ট্রলার ঘাটে আসা-যাওয়া করবে এবং আরো বেশি সংখ্যক ইলিশও বাজারে আসবে বলে আশা করছি।”
ফিশারীঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ইলিশ ধরার মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ১শ’ থেকে দেড়শ’ মেট্রিক টন ইলিশ আসে। আর মন্দা মৌসুমে আসে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন ইলিশ। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দুই মাসের মধ্যে দেড় মাসও সাগরে মাছ ধরতে পারেনি কক্সবাজারে জেলেরা।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, আগস্ট-সেপ্টেম্বর দুই দেড় মাসে সাগরে চারবার লঘুচাপ তৈরি হয়। এ কারণে বার বার মাছ ধরতে গিয়েও মাছ না ধরেই ফিরে আসতে হয় জেলেদের। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর সতর্ক সংকেত প্রত্যাহারের পর থেকে সাগরে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। আর গত কয়েকদিন ধরে মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৮ হাজার নৌ-যান আছে। যারমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে।
বোটগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। এ কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-