টিটিএন •
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ আগষ্ট, তিন মেয়াদে ছয় বছর ধরে কউক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
প্রতিবারই দুই বছর চুক্তিতে তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়, সবশেষ ২০২০ সালের ১৩ আগষ্ট দুই বছরের চুক্তিতে তৃতীয়বারের মতো তিনি কউক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
২০১৬ সালের যাত্রা শুরু করে গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অধীনে দেশের পঞ্চম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ফোরকান আহমদ কউকের প্রথম চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
এর আগে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে জেলা প্রশাসক কে সভপাতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ “কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন” জাতীয় সংসদে পাশ হয় এবং অই বছরের ১৪ আগষ্ট ফোরকান আহমদ যুগ্মসচিব পদ মর্যাদায় কউক চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমবার দায়িত্ব নেন।
# কে হচ্ছেন কউক চেয়ারম্যান?
আগামী শনিবার বর্তমান কউক চেয়ারম্যানের মেয়াদ পূর্তিকে কেন্দ্র করে জেলায় চলছে নানান আলোচনা। কউকের পরবর্তী চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন এমন প্রশ্ন নানান শ্রেনী পেশার মানুষের।
ফোরকান আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পরপরই শহরের আবর্জনার স্তুপ খ্যাত তিনটি পুকুরের সৌন্দর্য বর্ধন কাজ বেশ প্রশংসিত হয়েছে, এছাড়াও কলাতলীতে আবাসিক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে, ইতোমধ্যে শেষ হওয়া কউকের আইকনিক অফিস ভবন শহরের স্থাপত্যকলায় নতুন মাত্রা দিয়েছে, সেই সাথে কলাতলী থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত আলোকায়ন, শহরের কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ স্থানে ভাস্কর্যসহ বেশ কিছু কাজ সাধিত হয়েছে যা শহরের সামগ্রিক সৌন্দর্য কে বর্ধিত করেছে।
এসবের মাঝে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো কক্সবাজারের প্রধান সড়ক নির্মান প্রকল্প।বাসটার্মিনাল থেকে হলিডের মোড় পর্যন্ত ২শ ৫৮ কোটি ৮১ লক্ষেরও বেশী টাকার এই প্রকল্পের কাজের শুরুর দিকে প্রধান সড়ক বন্ধ করে নির্মান কাজ করা, রাস্তার উচ্চতা বৃদ্ধি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা ও সড়কে ভোগান্তির কারণে অসন্তোষের মুখে পড়ে, সেই সাথে করোনার উর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিক সংকট ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার কারনে প্রধান সড়কের কাজে নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন কউক চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদ।
তবে দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে কউক প্রধান সড়কের কাজ এগিয়ে নিয়েছে এবং সড়কের বার্মিজ মার্কেট থেকে ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত সড়কের অংশ নির্মান কাজ শেষে খুলে দেয়া হয়েছে।
বাকী কাজও ডিসেম্বরের আগে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।সব মিলিয়ে সাধারন মানুষ প্রথম দিকে নাখোশ থাকলেও, পরবর্তীতে কাজের মান,গতি আর ভোগান্তি কমায় এখন অনেকটা স্বস্তিতে। শহরের নানান শ্রেনী পেশার অনেকেই চাইছেন ফোরকান আহমেদ আবারও একই পদে আসীন হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফোরকান আহমেদের তিন মেয়াদে ৬ বছর শেষ হচ্ছে। তাঁকে চতুর্থবারের মতো নিয়োগ দানের আইনী সুযোগ বিধিতে নেই।যদি নিয়োগ দিতে হয় তবে আইনের সংশোধন করেই দিতে হবে।
বিষয়টি সংসদে বিল আকারে পাশ করতে হতে পারে। তবে একটি সূত্র বলছে,মেয়াদ শেষে পরবর্তী কাউকে নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ বিধিতে আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, “সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে কউক কে একটি পূর্নাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে রুপ দিয়েছেন ফোরকান আহমেদ। তিনি দক্ষতার সাথে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেছেন,এখন ফল ভোগের সময়।সরকারের উচিত ফোরকান আহমদের বিষয়টিকে বিবেচনায় আনা।”
কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মনে করেন,আইনী জটিলতা থাকলেও ফোরকান আহমেদ যোগ্য তাই তাকে আরেকবার সুযোগ দেয়া হোক।
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে । নতুনত্বের স্বাদ চান কেউ কেউ। বাপা কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিমুল্লাহর মতে, চেয়ারম্যান পদে যেই আসুক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেনো অক্ষুন্ন থাকে।
এদিকে, পরবর্তী মেয়াদে কউক চেয়ারম্যান হিসেবে অনেকেরই নাম নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। ফোরকান আহমেদ ছাড়াও এতে রয়েছে, পরিবেশ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদদের নাম।
এ প্রসঙ্গে, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৩ আগষ্ট এ মেয়াদে তার দায়িত্ব শেষ হচ্ছে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-