কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী জলবায়ূ পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাবের কারণে বাগেরহাটের সমুদ্র উপকূলবর্তী মোংলা উপজেলার শিল্প, বন্দর, পৌর এলাকাসহ মোড়েলগঞ্জ, শরনখোলা উপজেলা জুড়ে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করলেও সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ।
অধিকাংশ উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি সিডর, আইলা, আম্ফানসহ জলোচ্ছ্বাসে স্থানীয় জলাধার বা পুকুরগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে গেছে। আবার কোথাও খরার কারণে জলাধার শুকিয়ে গেছে। এছাড়া সঠিক পরিচর্যার অভাবে পুকুরে সংযোগ দেওয়া পিএসএফ ফান্ডের পানি শোধনাগারগুলোও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির এই চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সরকার ও এনজিও থেকে দেওয়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাংক কোনো কাজেও আসছে না। সম্প্রতি সুপেয় পানির সমাধানে একটি বেসরকারি এনজিও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি স্ট্রুপ পিটারসনের উপসিস্থিতিতে মোংলায় তিনবছর মেয়াদী একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৭০ হাজার পরিবারকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার একটি প্রকল্প শুরু করলেও শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়ায় এইসব প্রকল্পের সুফল মিলছে না।
বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের তথ্যমতে, শুধুমাত্র মোংলাতেই শতকরা ৮৫ ভাগ সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই সমস্যা সমাধানে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি মোংলাপোর্ট পৌরসভা ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনগুলোও এই সংকট থেকে উত্তরণে কাজ করছে।
মোংলাবাসী বিশেষ করে বন্দর এবং শিল্প এলাকার সুপেয় পানির সংকট রোধে ভূ-উপরিস্থ দৈনিক ৫০০০ লিটার পানি শোধনাগারের কাজ এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্প শেষ হলে মোংলা বন্দর ও আবাসিক এলাকা, ইপিজেড এবং সমুদ্রগামী জলযানগুলোর সুপেয় পানির সংকট অনেকখানি লাঘব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে এই সুপেয় পানির সংকট। তাই একটি টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে অনাবৃষ্টির কারণে আমাদের যেসব বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ট্যাংকি রয়েছে সেগুলোও খালি পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে নদীর লবণাক্ত পানি ফিটকিরি দিয়ে পান করছি। এতে শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমরা উপকূলবাসী সরকারের কাছে এই সমস্যা সমাধানে একটা সময়োপোযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
বাগেরহাটের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও তীব্র খরায় অধিক পরিমাণে পানি বাষ্পীভূত হওয়ায় পুকুর বা জলাধারগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। তাই প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে রিফাউন্ডিং রিজার্ভার তৈরি করে পরিশোধন করে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাপা নেতা পরিবেশ কর্মী নূর আলম বলেন, উপকূলের মানুষের প্রধান সংকট সুপেয় পানি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবসময়ই সুপেয় পানির জন্য হাহাকার। আমরা চাই একটা টেকসই সুপেয় পানি ব্যাবস্থাপনা। যাতে আমরা সুপেয় পানি পান করে জীবনধারণ করতে পারি।
জাগোনিউজ২৪
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-