আমদানির পরেও চালের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা!

কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
বিদেশ থেকে চাল আমদানির সময়েও সুখবর নেই দিনাজপুরের চাল ব্যবসায়ীদের কাছে। বরং চার কারণে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। চালের দাম যাতে বৃদ্ধি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কারণগুলো হলো- চলমান লোডশেডিংয়ের ফলে প্রতিটি মিলে কমপক্ষে প্রায় ২০ শতাংশ করে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বাজারে ইরি-বোরো মৌসুমের ধান প্রায় শেষের দিকে। যতটুকু ধান বাজারে উঠছে সেগুলো মজুতদারের মজুত করা ধান। সেই ধানের দাম তারা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ধান সংকটের কারণে চালের উৎপাদন কমেছে ৫০-৫৮ শতাংশ। পাশাপাশি ভারত থেকে যেসব চাল আমদানি করা হচ্ছে সেগুলোর ডলারের পরিশোধ মূল্য বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের মূল্য কমেছে, কিন্তু ডলারের পরিশোধ মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের আমদানি মূল্য বেড়েছে ৭.২ শতাংশ। এসব কারণে চালের দামও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তারা।

দিনাজপুর বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তার দাম ৩১০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। আঠাশ জাতের চালের প্রতি বস্তার দাম ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা, উনত্রিশ জাতের চালের প্রতি বস্তার দাম ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, সুমন স্বর্ণা চালের প্রতি বস্তার দাম ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকা ও গুটি স্বর্ণা চালের প্রতি বস্তার দাম ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক মাস আগেও এই দামেই বিক্রি হয়েছে চাল। অর্থাৎ এক মাসে চালের দাম বাড়েওনি আবার কমেওনি। যদিও কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলেছেন, চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

মেসার্স খাদ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী আলাল উদ্দিন বেপারী বলেন, আমদানির এই সময়ে চালের দাম কমার কথা। বাজারে ১০ দিন আগে চালের দাম যা ছিল, তার থেকে প্রতি বস্তায় এখন বেড়ে গেছে ৭০ টাকা। তারউপর বাজারে চালের ক্রেতা নেই। ক্রেতা কমে যাওয়ার কারণে মহাজনদের টাকা ঠিকভাবে দিতে পারছি না। দিনাজপুর চাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আজগার আলী বলেন, সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে। এই সময়টাতে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু এখনও আমাদের কাছে আমদানির কোনো চাল আসেনি। ফলে আমরা মনে করেছিলাম আমদানির চাল এলে দাম কমবে, সেটি আর হয়নি।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী মেরাজ ইসলাম বলেন, বাজারে চালের ক্রেতা খুবই কম। তবে দাম স্থীতিশীল আছে। শুনেছি এলসির চাল আমদানি শুরু হয়েছে। এই চাল এখনও বাজারে আসেনি। বাজারে এলে হয়ত দামের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় মোট মিলের সংখ্যা প্রায় ২০০০টি, যার মধ্যে প্রায় ৩০০টি অটোরাইস মিল আছে। ধানের ভরা মৌসুমে এইসব অটোরাইস মিল থেকেই প্রতিদিন চাল উৎপাদন হয় ৭০০০-৮০০০ মেট্রিক টন। কিন্তু বর্তমানে ইরি-বোরো মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, বাজারে ধানের আমদানিও কম। ফলে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৩০০০-৪০০০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ধান থেকে চাল উৎপাদন কমেছে ৫০-৫৮ শতাংশ।

একটি অটোরাইস মিলে ধান থেকে চাল উৎপাদনের মোট ব্যয়ের প্রায় ১৫ শতাংশ থাকে বিদ্যুৎ। বর্তমানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অন্যান্য ব্যয়গুলো চলতে থাকে, কিন্তু চাল উৎপাদন হয় না। আবার হঠাৎ করে লোডশেডিং হলে মেশিনপত্রও নষ্ট হয়ে যায়। যার খরচটা পড়ে যায় চাল উৎপাদনের ওপর। এতে করে ধান থেকে চাল উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদেশ থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা চালের মূল্য ৩০০ ডলার, যা গত বছরে ছিল ৩২৫ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ৭.৭ শতাংশ। ফলে বেশিরভাগ আমদানিকারকই ভারত থেকে চাল আমদানি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু চাল আমদানির পরিশোধমূল্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরে ডলার পরিশোধমূল্য ছিল ৮৬ টাকা, বর্তমানে সেই মূল্য ১০১ টাকা। সেই হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে ডলার পরিশোধমূল্য বেড়েছে ১৪.৯ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী গত বছরের তুলনায় এবার আমদানি করা চালের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৭.২ শতাংশ।

বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আমদানিকারক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মেশিনপত্রও নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর বাজারে ধান না থাকায় ধান থেকে চাল উৎপাদন কমেছে। আগে যেখানে শুধুমাত্র অটোরাইস মিল থেকেই প্রতিদিন ৭০০০-৮০০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হতো এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩০০০-৪০০০ মেট্রিক টন। পাশাপাশি মজুতদারও ধানের দাম বৃদ্ধি করছেন।

অন্যদিকে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই ডলার পরিশোধমূল্য বেড়েছে। যার পুরো ব্যয়টিই পড়ে যাচ্ছে চালের ওপর। এমন অবস্থায় অনেক আমদানিকারকই চাল আমদানি করছেন না বা করলেও কম করে করছেন। এমন অবস্থায় চালের মূল্য বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরাও চাই কোনোভাবেই যাতে চালের মূল্য না বাড়ে। তাই কিভাবে ডলারের পরিশোধমূল্য কমিয়ে আনা যায় এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং কমিয়ে আনা যায় সেটি সরকারকে আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে দেখতে হবে।

এদিকে দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, ডলারের মূল্য প্রতিনিয়তই ওঠানামা করে। চাল আমদানির অনুমতি তো নির্দিষ্ট একটি সময়ে দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা যাতে করে চাল আমদানি করে এজন্য দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আমদানিকারকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। চাল আসছে এবং এলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে।
জাগোনিউজ২৪

আরও খবর