সিনহা হত্যার দুই বছর

উচ্চ আদালতে মামলা, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি চায় বাদীপক্ষ

জার্নাল প্রতিবেদক •

উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলা। আর বাদীপক্ষ সাজা বাড়ানোর আবেদন জানাতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সিনহার বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস সমকালকে বলেন, নিম্ন আদালতের মতো উচ্চ আদালতেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছি। শুরু থেকেই আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশী ছিলাম।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজানুর রহমান বলেন, আসামিপক্ষ এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। বাদীপক্ষ সাজা বাড়ানোর যুক্তি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবে।

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ মামলার ১ নম্বর আসামি পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির দণ্ড দেন আদালত।

এ ছাড়া রায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। তাঁরা হলেন- টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এপিবিএনের কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা; মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি নেজাম উদ্দিন, নুরুল আমিন ও মো. আইয়াজ। একই সঙ্গে এই ছয়জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

রায়ে ৭ জন বেকসুর খালাস পান। তাঁরা হলেন- বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের এএসআই মো. লিটন মিয়া, টেকনাফ থানার কনস্টেবল ছাফানুল করিম, মো. কামাল হোসাইন আজাদ, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন। সিনহা হত্যার পর ওসি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির নানা তথ্য সামনে আসতে থাকে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ওই কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

চেকপোস্টে গুলিতে সিনহা নিহতের পর পুলিশ শুরুতে দাবি করে- ‘সিনহা তল্লাশিতে বাধা দেন। পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে গুলি করে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সিফাতকে। ওই মামলায় সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর পর সিনহা যেখানে অবস্থান করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকেও পুলিশ আটক করে। নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। এই ঘটনায় করা মোট চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

ঘটনা তদন্তে ১ আগস্ট চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কমিটিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতিনিধিও ছিলেন। পরে ৫৮৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ভূমিকাকে হটকারী ও অপেশাদারি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। সিনহা হত্যার ৬ দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে লিয়াকত-প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।

আরও খবর