অভিমান করে ছেলেটি বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বের হলেও সে স্কুলে না গিয়ে খুঁজে নেয় অ্যাডভেঞ্চার জীবন। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও প্রথম লক্ষ্য ড্রাইভার হওয়া। তাই লালদিঘি পাড়ে এক মাইক্রোবাস ড্রাইভারের কাছে গিয়ে পরিবারের তথ্য লুকিয়ে বেছে নেয় মাইক্রোবাসের হেল্পারের জীবন।
সেই মাইক্রোবাসের পার্কিং আবার আমার বাসার নীচে। একদিন ভোরে আমি বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় দেখলাম ছেলেটি মাইক্রোবাস মুচছে। ফিরে এসে তার সঙ্গে কথা বললাম। সিকিউরিটি বলল, ছেলেটির নাকি মা বাবা কেউ নেই, অসহায়। তাই লেখাপড়া ছেড়ে গাড়ির হেল্পারি করছে।
এত সুন্দর ফুটফুটে ছেলে স্কুলে যাবার বয়সে লালাদিঘি পাড়ে গাড়ির হেল্পারি করবে? মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি তার সঙ্গে অন্তত একঘণ্টা কথা বললাম। ড্রাইভার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ছেলেটি আমার কাছেও পারিবারিক অনেক তথ্য লুকালো।
আমি তাকে বললাম, স্বপ্ন দেখবা যখন বড় স্বপ্ন দেখো। এতো ছোট কেন? এটা তোমাকে উন্নত জীবন দেবে না। তার একটাই কথা ড্রাইভার ‘কীভাবে হবো’।
সারাদিন ছেলেটির চিন্তায় অস্থির ছিলাম। হোস্টেলে রেখে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করাবো বলেছি, ছেলেটি তাতেও রাজি না। মা-বাবাহীন ছেলেটির জীবন কী এভাবেই নষ্ট হয়ে যাবে। রাতে হঠাৎ ফেসবুকের স্ক্রিনে দেখলাম ছেলেটির ছবি। হারিয়ে যাওয়া ছেলের খোঁজে স্বজনদের কারো স্ট্যাটাস। দেওয়া হলো যোগাযোগের নম্বরও।
এতো আমার দেখা সেই ছেলেটি। আমার দেখা চেহারার সঙ্গে ছবির মিল। স্বজনদের ফোন করলাম। রাতটি তারা কষ্টে কাটালেও ভোরেই এসে উপস্থিত আমার বাসার নীচে। থানায় জিডি। পুলিশের দৌড়ঝাপ। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ। পত্র-পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি। সাত রাজার ধন হারিয়ে মা-বাবার নির্ঘুম রাত। নাওয়া খাওয়া বন্ধ। সব কিছুর অবাসান হলো আমার এই একটি ফোনে। সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো মা-বাবা, স্বজনদের। কিন্তু সন্তানের ড্রাইভার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ালাম আমি। তাকে তুলে দিলাম তার বাবার হাতে।
মাঈনুর, আমার ওপর রাগ করোনা বাবা। ড্রাইভার নয়; তুমি একদিন পাইলটই হবে, দোয়া করি।
উল্লেখ্য, অভিমান করে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া মাঈনুর রহমান চট্টগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী।
লেখক : ব্যুরো চিফ, দৈনিক যুগান্তর, চট্টগ্রাম।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-