আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল •
রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মাদকের প্রসার, মানবপাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ বিরোধ, বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষ, খুন, অপহরণ এবং ধর্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নানা অপরাধও।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বিভিন্ন জাল সনদপত্র এবং এসব তৈরির সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
বুধবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে আবদুল্লাহ নামক এক রোহিঙ্গার বসতঘর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের ক্যাম্প-১ডব্লিউ এর ব্লক এফ-১০ এর মোঃ ইসলামের পুত্র মোঃ আবদুল্লাহ (৩৭), একই ব্লকের মুসা খলিলের পুত্র আবুল খায়ের (১৮), এফ-১৩ ব্লকের হাবিবের পুত্র মোঃ ত্বালহা ও মোঃ হারুণ এবং টেকনাফ শাহপুরি দ্বীপ উত্তর পাড়ার সৈয়দ হোসেনের পুত্র মোঃ ইসমাইল (৪৫)।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৮ আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে ক্যাম্পে একটি চক্র ঘরে বসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নকল ভুয়া বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন প্রকার জাল সনদ তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সাধন করে আসছে।
এ ধরনের ভুয়া জাল সনদ ও আইডি তৈরির তথ্য পেয়ে এপিবিএনের চৌকস আভিযানিক দল গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানে গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহর ঘর তল্লাশী করে ৪টি ল্যাপটপ, ৮টি স্মার্টফোন, ৪টি পেনড্রাইভ, ২টি স্ক্যানার+ প্রিন্টার, ২৮টি অনলাইন ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন রেজিষ্ট্রেশন, ১১ টি জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই, ৩০টি ডুপ্লিকেট জন্মসনদ, ২০টি ডুপ্লিকেট এনআইডি, ২০০টি বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডির ফটোকপি, ২০টি ডুপ্লিকেট এনআইডি, ২০০টি বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডির ফটোকপি, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের চেক বই ও জমা দেওয়ার বই, ৫টি সিল, ১টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন সনদ পত্র, ২০টি শাহপুরি বাস্তহারা আদর্শ গ্রাম সমবায় সমিতি লিঃ এর সদস্য ফরম, ৩৫টি টাকা জমা দেওয়ার পাশ বহিঃ, ৮টি রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স, যার প্রত্যেকটিতে মোঃ আবদুল্লাহ নামে লিপিবদ্ধ, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয়তা সনদ সহ আরো বিভিন্ন নামের ৪টি জাতীয়তা সনদ, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিহীন সনদ-৫ টি, আবদুল্লাহ নামের ইলেক্ট্রিক বিলের কাগজ পত্র, বিভিন্ন ধরণের জায়গা জমির দলিল ও খতিয়ান, মোঃ ইসমাইলের জন্ম সনদ ও আইডি কার্ড, মোঃ ত্বালহা এর সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় সনদ, জন্ম সনদ এনআইডি (নকল) ও মোঃ হারুন এর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরে তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে নকল বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন বলে স্বীকার করেন।
সাধারণ রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ এবং বিদেশে গমনের জন্য পাসপোর্ট তৈরির লক্ষ্যে চক্রটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে এই অসাধুচক্রের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-