কক্সবাজারে বসছে ৬৮টি কোরবানির হাট

এম বেদারুল আলম •

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা সমাগত। আগামি ১০ জুলাই এ কোরবানির ঈদ। ঈদের প্রধান কাজ সামর্থ অনুযায়ি পশু কোরবানি। জেলায় এবারের ঈদে ছোট-বড় ৬৮টি কোরবানির হাট বসছে। বেসরকারি হিসাবে তা শতাধিক। বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা ও সর্বসাধারণের নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে পুলিশ।

এ ছাড়াও নেওয়া হয়েছে নানা প্রশমনমূলক কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাজারে কোরবানের পশু পরীক্ষার জন্য প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে পশু টেষ্ট মেডিকেল টিম। জাল নোট সনাক্তকরণে বাজারে থাকছে বিশেষ জালনোট সনাক্তকরণ মেশিন। ছিনতাইকারিদের দৌরাত্ব্য বন্ধে এবং ক্রেতা- বিক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশের বিশেষ টিম।

কোরবানের বাজারে নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, “কোরবানের পশুর হাটের নানা বিষয় নিয়ে প্রস্তুতি সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের র্নিবিঘ্নের জন্য প্রতিটি বাজারে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সর্বসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে বিকিবিকি করতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।

প্রতিটি বাজারে ১টি করে পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করবে পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও বিশেষ পুলিশ সদস্যরা আলাদাভাবে মোতায়েন থাকবে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে পশু নিরোগ ও সঠিকতা যাছাই করতে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়।

এ বছর জেলায় ৬৮টি পশুর হাট বসছে যার মধ্যে সদরে ১৪টি, রামুতে ৭টি, চকরিয়ায় ১৯টি, পেকুয়ায় ৮টি, উখিয়ায় ৮টি, টেকনাফে ৭টি, মহেশখালীতে ৬টি, কুতুবদিয়ায় ৬টি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে বাজারের সংখ্যা শতাধিক বলে জানা গেছে।

এদিকে সদরে ১৪টি কোরবানের পশুর হাট ইজারা হলেও প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যমতে পশুর হাট বসছে ৭টি। তবে উভয় দপ্তরের মধ্যে সংখ্যায় গড়মিল হলেও সদরের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তর পশুর হাট খরুলিয়াবাজার এ বছর ইজারা হয়নি। সর্বোচ্চ দরদাতা ফয়েজ এন্ড ব্রাদার্স ১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ইজারা ডাককারি হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার ডাক নেয়নি বলে জানান সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসের অফিস সহায়ক উত্তম কুমার দাশ।

তিনি বাজারটি খাস কালেকশানে দিয়েছেন বলে জানান। এছাড়া ঈদগাহ বাজার ডাক হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়।
অন্যান্য বাজার হলো কালিরছড়া বাজার, পোকখালী মুসলিম বাজার, পিএমখালী জুমছড়ি বাজার।

এদিকে গত বুধবার খরুলিয়া বাজারে ২শতাধিক গরু বিক্রি হয়েছে। কাল রবিবার নিয়মিত হাটবারের পাশাপাশি কোরবানের পশুর হাট। ইতোমধ্যে খরুলিয়া বাজারে ১ হাজারের মত গরু মহিষ তোলার জন্য মজুদ রয়েছে। গতবছর গরুর সারি প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কজুড়ে ছিল। এ বছর প্রচুর গরু বাজারে সরবরাহ থাকলে ও মাঝারি মানের গরুর দাম বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে আগামী সপ্তাহে গরু বিক্রি বাড়তে পারে সদরের ঈদগাঁও বাজার, পিএমখালীর জুমছড়ি বাজার, রামুর কলঘর বাজার, মিঠাছড়ির কাটির রাস্তা বাজার, উখিয়ার রুমখাঁ বাজারসহ প্রায় সবকটি বাজারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে দেশিয় প্রচুর গরু মজুদ করেছে বিক্রেতারা।

হাট সমুহে ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তা জোরদারের পুলিশি টহল জোরদারের পাশাপাশি নতুন করে সাজানো হয়েছে হাটসমুহকে। সকাল থেকে রাত অবধি যেন নির্বিঘ্নে বিকিকিনি করা যায় এজন্য সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি বাজারের ইজারাদার ।

এদিকে সদর উপজেলার তথা জেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট খরুলিয়া বাজারসহ ৪টি হাটই সড়কের উপর হওয়ায় দূর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার পৌরসভায় এবার বাজার ১টি বসছে। সেটি খুরুস্কুল রাস্তার মাথার বাজারকে স্থানান্তর করে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী নারকেল বাগানের পাশে রেললাইনে ইজারা দিয়েছে পৌরসভা।

এদিকে গেল বাংলা বর্ষে খরুলিয়া ও ঈদগাঁও বাজার সারা বছরের জন্য ইজারা সম্পন্ন করেছিল সংশিষ্ট প্রশাসন। এ বছর খরুলিয়া বাজার ইজারা না হওয়ায় ২ কোটি টাকার মত রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। গত বছর ২টি বাজার নিলাম হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খরুলিয়া বাজারের ইজারা হয়েছে রেকর্ড ২কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ঈদগাঁও বাজারের ইজারা হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।

পিএমখালীর নুর মোঃ চৌধুরীর বাজার, জুমছড়ি বাজারও ইজারা হয়েছে। কোরবানির পশুরহাট ইজারার মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলে ও বাজার সমূহের উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হতাশ ইজারা গ্রহিতারা।
ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়িদের অভিযোগ, জেলার বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট খরুলিয়া বাজার প্রতি বছর সর্বোচ্চ টাকায় ইজারা হলেও বাজারটির উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। মহাসড়কের উপর প্রতি বছর বাজার বসে। ফলে ঈদুল আযহার সময় গরু কিনতে আসা অনেক লোক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বাজার বসার জন্য পর্যপ্ত জায়গা না থাকায় ইজারাদাররা নিরুপায় হয়ে সড়কের উপর পশুর হাট বসাতে বাধ্য হন বলে জানান। নির্মাণ করা হয়নি বিভিন্ন শেডের।
প্রতি রবি ও বুধ বার সপ্তাহে ২ দিন নিয়মিত পশুর হাট বসলেও ক্রেতা-বিক্রেতা চরম ঝুকি নিয়ে সড়কের উপর বিকিকিনি সারছে। সড়কের উপর বাজার বসার কারণে সড়কের উভয় পাশে মাটি সরে গিয়ে মহাসড়কের মারাত্বক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
অপরদিকে সদরের অপর বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট ঈদগাও বাজার ও এ বছর ঈদুল আযহায় ইজারা হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। এ হাটটি ও মহাসড়কের উপর বসার  কারণে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি তীব্র যানজট লেগেই থাকে। খরুলিয়া ও ঈদগাও বাজারের ইজারাদাররা সড়ক দুর্ঘটনার কবল থেকে ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাধারণ পথচারিদের রক্ষায় মহাসড়কের উপর থেকে সুবিধাজনক স্থানে কোরবানির পশুর হাট স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট।

আরও খবর