আট হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আদালতে হয়ে গেল ৫০০০

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম •

কুমিল্লার দেবিদ্বারের জাফরগঞ্জ এলাকার মনীন্দ্র দাশের ছেলে অমর দাশ। ৮ হাজার ইয়াবা নিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। এর পর থেকে বন্দি ছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। চট্টগ্রাম আদালতে জামিন না পেয়ে আবেদন করেন হাইকোর্টে।. কারাগারে বন্দি হওয়ার সাড়ে ১৬ মাস পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মাদক কারবারি অমর দাশ।

কিন্তু হাইকোর্টের জামিন আদেশে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৫ হাজার। কিন্তু মামলার মূল নথিতে উল্লেখ করা হয় ইয়াবা উদ্ধার ৮ হাজার। ইয়াবার পরিমাণ কম দেখিয়ে হাইকোর্টে জামিন জালিয়াতি করেন আসামি। যদিও জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও শেষ রক্ষা হয়নি অমর দাশের। ইয়াবার সংখ্যায় গরমিলের ঘটনা চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের নজরে আসার পর আটকে যায় তাঁর জামিন।

চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টে জামিন পেতে আসামিপক্ষ ইয়াবা উদ্ধারের সংখ্যা কম দেখিয়ে জালিয়াতি করে জামিন নিয়েছেন। চট্টগ্রাম আদালতে হাইকোর্টের জামিনের কাগজ জমা দেওয়ার পর মূল নথির সঙ্গে হাইকোর্টে উল্লেখ করা ইয়াবার গরমিল থাকায় তার জামিন আবেদন নথিজাত করা হয়। এখন হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা এলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন দায়রা জজ আদালত।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেন, হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মিছ ৪৭৮৮৬/২০২১ মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর তারিখের আদেশে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন দায়রা- ১৪৭/২০২১ নম্বর মামলার আসামি অমর দাশকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালিন জামিন মঞ্জুর করেন। ওই আদেশে জামিননামা সম্পাদনের সময় আদেশে উল্লিখিত সর্বমোট ৫ হাজার পিস ইয়াবার পরিমাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। মামলার মূল রেকর্ডে উদ্ধারকৃত সর্বমোট ইয়াবার পরিমাণের সঙ্গে গরমিল পরিলক্ষিত হয়। তাই বিষয়টি হাইকোর্ট বিভাগের গোচরে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। মূল মামলার নথি পর্যালোচনায় উদ্ধার ও জব্দকৃত সর্বমোট ইয়াবার পরিমাণ ৮ হাজার পিস।.

পক্ষান্তরে হাইকোর্টের আদেশে উদ্ধারকৃত সর্বমোট ইয়াবার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫ হাজার পিস। স্বাভাবিকভাবেই সর্বমোট ইয়াবার পরিমাণে দৃশ্যত গরমিল পরিলক্ষিত হয়। আসামির জামিনের বন্ড নথিভুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য আপনাকে অবগত করা হলো।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ জুলাই এক সহযোগীসহ রেলওয়ের কদমতলী সংকেত কারখানার সামনে থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ অমর দাশকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ। তাঁকে সবাই চেনেন বিকাশের দোকানদার হিসেবে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিকাশের দোকান করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু গত সাত বছর ধরে বিকাশের ব্যবসার আড়ালে করছিলেন ইয়াবার ব্যবসা। ইয়াবার টাকা লেনদেনের সুবিধার জন্যই বিকাশের ব্যবসাকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

এর আগে ২০১৮ সালে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া অন্য আরেকটি মাদক মামলারও আসামি অমর দাশ। তিনি চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানাধীন নালাপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন।

আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে পুলিশ উল্লেখ করেন, অমর দাশ বিকাশের ব্যবসার আড়ালে গোপনে ইয়াবা ব্যবসা করতেন। তিনি রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ইয়াবা সরবরাহ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ইয়াবার টাকা লেনদেনের সুবিধার জন্য বিকাশের দোকান দেন।

সাতকানিয়ার নাজিম ও আহাদ নামে দু’জনের কাছ থেকে তিনি ইয়াবা সংগ্রহ করে পাইকারি দামে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করতেন। ইয়াবা কারবারে অমরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছেন অলি উল্লাহ। গ্রেপ্তারের সময় অমর দাশের কাছ থেকে একটি মোবাইল ও নগদ ৭৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর বাসা থেকে একটি ল্যাপটপ, ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

আরও খবর