সারোয়ার সুমন :
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ৪৯ জন। ভয়াবহ এমন বিস্ফোরণ আগে কখনও দেখেনি চট্টগ্রাম। বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় হতবাক হয়েছে ফায়ার সার্ভিসও। সবাইকে এভাবেই অবাক করার নেপথ্যে ছিল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বোঝাই ৩৩টি কনটেইনার।
এসব কনটেইনারে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন রাসায়নিক পদার্থ ছিল। আগুনের সংস্পর্শে এলে এসব রাসায়নিক তীব্র দাহ্য হয়ে উঠে। এর সঙ্গে পানি যোগ হলে এটি ভয়াবহ বিস্ফোরকে পরিণত হয়। চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে হয়েছে এ ঘটনাটি। তদন্ত কমিটি এখনও রিপোর্ট না দিলেও কাস্টমসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও বিশেষজ্ঞরা এই বিক্রিয়ার কথা বলছেন সমকালকে।
৩৩টি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকার কথা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানির জন্য ৩৩টি কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রাখা ছিল।
জাহাজিকরণে ঝামেলা হওয়ায় কনটেইনারগুলো একটি শেডের নিচে রাখা ছিল। আগুন ও পানির সংস্পর্শে এসে এগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এসব রাসায়নিক অতটা দাহ্য নয়।’ তিনি জানান, ২০ ফুট দীর্ঘ একটি কনটেইনারে সাধারণত ২৫ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকে। এ হিসেবে ৩৩টি কনটেইনারে আনুমানিক ৮০০ মেট্রিক টন রাসায়নিক থাকতে পারে।
বিএম কনটেইনারে ডিপোতে ২০ ফুট দীর্ঘ মোট চার হাজার ৩১৮টি কনটেইনার ছিল। এর মধ্যে আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার ছিল ৫৫৭টি। রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার ছিল ৮৬৭টি। খালি কনটেইনার ছিল ২ হাজার ৮৯৪ টিইইউএস।
বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান বলেন, রাসায়নিক থাকা কনটেইনারগুলো আরও আগে রপ্তানির কথা ছিল। কিন্তু জাহাজিকরণে ঝামেলা হওয়ায় এগুলো ডিপোতে রাখা হয়। এভাবে ডিপোতে রাসায়নিক রেখে বছরের পর বছর তা রপ্তানি করা হয় দেশের বাইরে। আগুনের ঘটনা না ঘটলে এভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতো না ডিপোতে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যে অংশে আগুন নেভানো হয়েছে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নীল রঙের বেশ কিছু পতাস্টিকের কনটেইনার। কিছু ফেটে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। কিছু গলে গেছে। এসব কনটেইনারের গায়ে লেখা হাইড্রোজেন পারঅপাইড। কনটেইনারের ওপর স্টিকারে বড় করে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘হাইড্রোজেন পার অপাইড ৬০ শতাংশ’।
৩০ কেজির ওই কনটেইনারের স্টিকারেই লেখা রয়েছে ‘দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এবং তাপ পেলে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে।’ একটি কনটেইনারে উৎপাদনের তারিখ রয়েছে ২৮ এপ্রিল ২০২২। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৩। কনটেইনারের স্টিকারে লেখা উৎপাদক কোম্পানির নাম আল রাজী কেমিকেল কমপেতপ। প্রতিষ্ঠানটি বিএম ডিপোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল সেটা ডিপোর কেউ আগে জানায়নি। যার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথাগতভাবে পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করা হয়েছে। রাসায়নিক থাকার আগে জানতে পারলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। প্রয়োজনে ফোম ব্যবহার করতে পারতাম।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ রাশেদুল হোসাইন বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিস্ফোরিত হবে কিনা। স্বাভাবিকভাবে তাপের সংস্পর্শে এলে দাহ্য পদার্থ হয়ে উঠে। হাইড্রোজেন পার অপাইডের আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না। পানি দিলে উল্টো আগুন আরো বাড়বে। এটার অপিজেন সরিয়ে দিতে ফোম বা কার্বনডাই অপাইডের লেয়ার তৈরি করতে হবে।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-