ডেস্ক রিপোর্ট •
অনেকের মতো রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ড দেখতে গিয়েছিলেন সুমনও। ছোট ভাইকে ‘এই আসছি’ বলে গেলেও আর আসা হলো না তার। এই যাওয়াই শেষ যাওয়া সুমনের। রোববার হাসপাতালে মিলল সুমনের লাশ।
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। সেই আগুনের দৃশ্য মোবাইল ফোনের ভিডিও কলে বন্ধুকে দেখাচ্ছিলেন আফজাল। কিন্তু এমন মুহূর্তে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণে না ফেরার দেশেই উড়ে গেলেন কৌতূহলী হতভাগ্য আফজাল। শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডে সোনাইমুড়ি এলাকায় বিএম ডিপোতে এভাবে প্রাণ গেছে এই দুইজনের।
‘যমদূত’ যেন নগরের বন্দর থানাধীন নিমতলা বিশ্বরোড থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুমনকে। বিশ্বরোড এলাকায় একসঙ্গে থাকতেন চার ভাই। জীবিকা নির্বাহ করতেন গাড়ি চালিয়ে। সেই গাড়ি নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। যাওয়ার আগে ছোট ভাইকে বলেছিলেন, ‘আগুন দেখতে যাচ্ছি। চিন্তা করো না। চলে আসব।’
কিন্তু সেই যাওয়ার পর ফিরেও এসেছেন তিনি। কিন্তু লাশ হয়ে।’
রোববার দুপুরের দিকে চমেক হাসপাতালের মর্গে কথা হয় সুমনের ভাই মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই আসছি বলে আগুন দেখতে গিয়ে আর জীবিত ফিরে আসলেন না ভাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে তার লাশ পাই। এখন আমি তার স্ত্রী-সন্তানকে কী জবাব দেব?’
সুমন (৩০) নোয়াখালী সদর থানার সোনাপুর সুরেস্তা বাজার এলাকার মৃত মিজানের ছেলে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুমন ছিলেন মেজো। সুমন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ আর ছোট মেয়ের বয়স দেড় বছর বলে জানা গেছে।
বন্ধুর চলে যাওয়ার ঘটনা বলছিলেন আফজালের কাছের বন্ধু আকাশ। তিনি বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে ইমোতে ফোন দেয় আফজাল। বলে, এই দেখ আগুন জ্বলছে। এভাবে প্রায় মিনিট দশেক ধরে ভিডিও কলে অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য দেখাচ্ছিল সে। এরপরই বিকট শব্দ। তারপরে আফজালের আর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। ফোনে কল দিয়েও তার সাড়া মেলেনি। রোববার সকাল থেকে হাসপাতালে তাকে খুঁজছিলাম। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা লাশ ঘরে তার পরনের জামা দেখে লাশ শনাক্ত করি।’
আকাশ আরও জানান, পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আফজাল। তাদের বাড়ি সীতাকণ্ডে। যে ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেই ডিপোতে গত দুই বছর ধরে কন্টেইনার ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছেন করে আসছিলো সে। আর সেই প্রতিষ্ঠানেই প্রাণ গেলো তার।
আফজালের মেজো ভাই সজল বললেন, ‘ভাই আমাদের ছেড়ে এভাবে অকালে ছেড়ে যাবেন, সেটা কখনো ভাবিনি। এমনভাবে তিনি দগ্ধ হয়েছে, তার চেহারা পর্যন্ত চেনা যাচ্ছে না। কেবল পরনের কাপড় দেখেই বুঝেছি লাশগুলোর মধ্যে একটি লাশ আমার ভাইয়ের।’
সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বিএম কনটেইনার। প্রতিষ্ঠানটি মূলত পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে। এখান থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য কনটেইনারগুলো প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। ৩৮ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।
ঘটনার সময় সেখানে ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় অন্তত ২০০ শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন বলেও জানা গেছে। তবে সেখানে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ তখন ছিলেন তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৯ জন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-