ধর্ম ডেস্ক :
আল্লাহতায়ালা মানবজাতির প্রতি অনুগ্রহস্বরূপ এবং সত্যপথের দিশা হিসেবে কোরআন দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ। যা আরোগ্য অন্তরের ব্যাধির জন্য এবং পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ মুমিনের জন্য।’ (সূরা ইউনুস : ৫৭)
কোরআনের কল্যাণ সাধারণভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে কল্যাণ অর্জন করতে হলে তাকে নূন্যতম কিছু শর্তপূরণ করতে হবে। তবে প্রথম শর্ত হলো, কোরআন পাঠকের হৃদয় হতে হবে নিষ্কলুষ ও কল্যাণকামী; সত্যগ্রহণে সদা প্রস্তুত। তার চেয়ে বড় কথা হলো, কোরআন তার অফুরন্ত কল্যাণের দুয়ার পাঠকের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত খুলে দেন না, যতক্ষণ না সে কোরআনকে তার প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে। বরং কেউ যদি অন্তরের বক্রতা নিয়ে তা পাঠ করে, তবে তার পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
পবিত্র কোরআনকে সম্মান করা ও সংরক্ষণ করা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। ইমাম নববী বলেন: “আলেমগণ কুরআনগ্রন্থকে সংরক্ষণ করা ও সম্মান করার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত।” [আল-মাজমু (২/৮৫)]
আলেমগণ এমন কিছু অবস্থা উল্লেখ করেছেন যেগুলোতে পবিত্র কোরআনের অপমান হয়; যেমন- কোরআনকে মাটিতে ফেলে রাখা কিংবা নাপাক জায়গায় ফেলে রাখা কিংবা পা দিয়ে মাড়ানো কিংবা থুথু ফেলা… ইত্যাদি যে অবস্থাগুলো আল্লাহ্র বাণীকে অপমান করার প্রমাণবহ।
এ অবস্থাগুলোর মধ্যে যে রুমে কোরআনগ্রন্থ রাখা আছে সেই রুমে স্ত্রী সহবাস করার অবস্থাটি নেই; চাই কারো অন্য কোন রুম থাকুক কিংবা না থাকুক।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ মুসলমানদের ঘরে কোরআনগ্রন্থ থাকে। আলেমদের যতগুলো কিতাব দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে এতে আমরা আলেমদের এমন কোন কথা পাইনি যে, যেই রুমে কোরআনগ্রন্থ আছে সেই রুমে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না। যদি এমন কিছু হত তাহলে অবশ্যই তারা তাদের গ্রন্থসমূহে সেটি উল্লেখ করতেন ও বর্ণনা করতেন; যেমনিভাবে তারা অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। যেহেতু তারা এমন কিছু বা এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিছু উল্লেখ করেননি সুতরাং এটি মূল (জায়েয) অবস্থাকে আঁকড়ে ধরা ও মূলের উপর বহাল থাকার প্রমাণ বহন করে।
এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিল: আমি যে বিছানায় স্ত্রীকে সহবাস করি সেই বিছানার উপর মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রাখতে পারব? তিনি বললেন: হ্যাঁ।” [এই উক্তিটি আব্দুর রাজ্জাক তার মুসান্নাফ নামক গ্রন্থে (২/১৭১) বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে আবু দাউদ আল-মাসাহিফ নামক গ্রন্থে (৪৪৬) বর্ণনা করেছেন]
স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে প্রশ্নকারীর মাসয়ালাটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “বেড রুমে কুরআন ঢুকানো, ঘুমানোর আগে বিছানায় কুরআন পড়া ও একটি লোহার বক্সের ভেতরে বেড রুমে কোরআন রাখা কি জায়েয?
জবাবে তারা বলেন: কুরআনে কারীম বেড রুমে ও বিছানার উপর পড়া জায়েয; যদি ব্যক্তি জুনুবী (সহবাস উত্তর গোসল ফরয হওয়ার অবস্থা) না হয় এবং মুসহাফ থেকে পড়াকালে ওযু অবস্থায় থাকে।” [সমাপ্ত]
যদি বেড রুমে মুসহাফ রাখা হারাম হত; অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মিলন যেই রুমে সংঘটিত হয়ে থাকে; তাহলে আলেমগণ সেটা উল্লেখ করতেন এবং সেটি এড়িয়ে যেতেন না। যেহেতু এটি প্রায়ই ঘটে এবং এটি মানুষের জানা প্রয়োজন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-