মাহাবুবুর রহমান •
অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে সব ধরনের খামারের খাদ্যের। ৬ মাসের মধ্যে দ্বিগুণ দাম বেড়েছে গরু, মুরগী, মাছের খাদ্যের দাম। এতে আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন খামারীরা। আবার তার বিপরীতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মুল্য না পাওয়ার আশংকা করছেন খামারীরা।
এতে ভবিষ্যতে খামার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অনেকে। এদিকে ব্যবসায়িরা বলছেন ঢাকাতে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় কক্সবাজারে দাম বেড়েছে।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের দাবী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন খামারীরা। তাই বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানী শুল্কমুক্ত করা সহ প্লোট্রি খাদ্যের দাম কেন বাড়ছে তা খতিয়া দেখা দরকার।
পিএমখালী পাতলী এলাকার খামারী মোহাম্মদ রফিক বলেন, আমি কয়েক মাস আগে নিজের খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগী তুলেছি। ৪/৫ মাস আগে প্রতিবস্তা খাদ্য কিনেছিলাম ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা কিন্তু এখন সেই খাদ্য কিনছি ৩১০০ টাকায়। অথচ বর্তমানে খামারে ব্রয়লার মুরগীর রেইট চলছে কেজিতে ১২০ টাকা। অথচ আমার হিসাবে প্রতি কেজী মুরগি বড় হতে তার পেছনে খরচ পড়বে ১২৫ টাকা। তাহলে আপনারাই বলেন কিভাবে পোষাবে? লাভ করাতো দূরের কথা আসল টাকাই উঠবে না। তিনি বলেন, আমি ১০/১২ বছর ধরে খামার করছি এরকম খাদ্যের দাম আর কখনো বাড়েনি।
খুরুশকুল এলাকার গরুর খামারী আব্বাস বলেন, সামনে কোরবানের ঈদ আসছে তাই খামারে কিছু বাড়তি গরু তুলেছি। এখন খাদ্যের দাম দিতে গিয়ে সব টাকা চলে যাচ্ছে জানিনা কিভাবে কি করবো। তিনি জানান, ৫/৬ মাস আগে চিকন ভুসি কিনেছি ১২০০ টাকা সেই খাদ্য প্রতিবস্তা এখন ২২০০ টাকা। আর পাতাভুসি ৬ মাস আগে কিনেছি ১০৫০ টাকা এখন কিনছি ১৭৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টাকা খাদ্য লাগে। এখন জানিনা কোরবানের সময় গরু বিক্রি করে সেই টাকা উঠাতে পারি কিনা।
শহরের খুরুশকুল সড়কের জে এস প্লোট্রি দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে খামারের পশু খাদ্যের দাম। তার মধ্যে ফ্রেরস ফিড, গাজীপুর, তামিম এন্ট্রাপ্রাইজ, আস্থা নামের কোম্পানী গুলোর চার্ট দেখে জানা গেছে গত ৬ মাসের মধ্যে প্রতিটি খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানী গুলো।
তার পাশ্ববর্তী কৃষি ফিড নামের প্রতিষ্টানে গিয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, সব খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এত দাম দিয়ে খাদ্যকিনে কোন খামারী লাভ করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়িরা যার যা ইচ্ছা তাই করছে সে জন্য সব কিছুর দাম বাড়ছে। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আগে খাদ্যগুলোর মান ভাল ছিল বর্তমানে দাম বেশি কিন্তু খাদ্যের মানও ভাল না। এগুলো দেখবে কে ?
এদিকে মিঠাছড়ি এলাকার খামারী আবুল কালাম বলেন, আমি খামার করছি ১৫ বছর হবে। অতীতে কোন দিন খাদ্যের এমন দাম দেখিনি। শুধু খাদ্য নয়, বাচ্চা মুরগী, বিদ্যূতের দাম, কর্মচারীদের বেতন, সব কিছু বাড়তি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আগামী আসে খামার বিক্রি করে দিব। কারণ খামার করা সম্ভব হবে না।
এদিকে উখিয়া উপজেলার রতœাপালং এলাকার মাছের খামারী আবদুল্লাহ বলেন, আমি ১৭ বছর বিদেশ ছিলাম। সেখান থেকে এসে বর্গা নিয়ে এবং কিছু নিজের জমিতে মাছের চাষ করেছি। প্রথম ২/৩ বছর কিছুটা ভাল করলেও বর্তমানে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। কারণ খাদ্যের দাম এত বেশি, তার উপর অন্যান্য খচর অনেক বেশি বেড়ে গেছে। তাই আমি চলতি মৌসুমের পরে আর চাষ করবো না। এভাবে অনেক খামারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত খাদ্যের দাম বাড়াতে লাভ করতে না পারার আশংকায় অনেকে খামার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ অসীম বরণ সেন বলেন, সব ধরনের খামারের পশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারীরা। তাই দ্রæত প্লোট্রি নীতিমালা প্রণয়ন করে, খাদ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে বিদেশ থেকে আমদানী করা খাদ্য উপকরণ গুলো শুল্ক মুক্ত করে দেশের খামারীরা যাতে বাচঁতে পারে সেই ব্যবস্থা করা উচিত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-