ঈদগাঁওতে জমি দখলে বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, বৃদ্ধসহ আহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক •

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলে নিতে অসহায় পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। খলিলুর রহমান নামের এক বৃদ্ধের কেনা জমি দখলের চেষ্টায় বার বার তার বসতভিটায় হামলা চালায় একটি ভূমিদস্যু চক্রের দুর্বৃত্তরা। এতে হামলার শিকার বৃদ্ধসহ কয়েকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার (২০ মে) বিকেলে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাঁশ কাটা এলাকায় হামলার ঘটনাটি ঘটে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে ইসলাম আহামদ থেকে ২০০৯ সালে নাপিত খালী মৌজার বিএস ৫৯৭ নং খতিয়ানের ১২৩৬ দাগের ২০ শতক জমি ক্রয় করেন ঈদগাঁও ইসলাপুরের নাপিত খালী বটতলী এলাকার মৃত আবদু শুক্কুরের ছেলে খলিলুর রহমান। ক্রয়ের পর জমিটির দখল বুঝিয়ে দেন খলিলুর রহমানকে। পরে খলিলুর রহমান তার নামে জমিটি সৃজত খতিয়ান সম্পন্ন করেন।

কিন্তু ২০১৮ সালে ইসলাম আহামদ একই জমি নিজের মেয়ে তাহেরা বেগমকে হেবা করে দেন। পরে তাহেরা বেগমের স্বামী বাহাদুর ও তার ছেলেরা স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্র ও বিভিন্ন মামলার দাগি আসামীদের হাতে নিয়ে জমিটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এবং জমিটি দখলে নিতে নানা ধরণের পাঁয়তারা চালায়। এমনকি জমি ছেড়ে না দিলে খলিলুর রহমানকে প্রাণে মারার হুমকি দেয় দখলবাজরা।

এমতাবস্থায় ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান বসতভিটা রক্ষা করতে আইনের আশ্রয় নেয়। আদালত তার কাগজপত্র দেখে উপজেলা ভূমি অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। ভূমি কমিশনার তদন্তের মাধ্যমে জমিটি আমাদের দখলে রয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দেন। এরপরও অভিযুক্তরা জমিটি দখল করতে চাইলে আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে জমিটি তারা দখল নিতে চায়।

এক পর্যায়ে শুক্রবার বিকেলে চকরিয়ার বির্তকিত যুবক রাজিব চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী জমিটি দখল করে নিতে খলিলের পরিবারে হামলা করে। এসময় খলিল ও তার পরিবারের লোকজনের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায় তারা।

হামলাকারীরা হলো- চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুলছড়ি এলাকার মৃত নুর হোসেনের ছেলে আবছার, আবদুল জলিলের ছেলে বাহাদুর, ইসলামের ছেলে টিটু, বাহাদুরের ছেলে মিজান, রানা, রিদুয়ান, শাহজাহান, ইসলামের ছেলে মান্নান, আবদুল জলিলের ছেলে কলিম উল্লাহ, আদুস সামাদের ছেলে আমান এবং আজিজুল হকের ছেলে নাহিদ।

ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার নিজের কষ্টে অর্জিত টাকায় জমিটি ইসলাম আহামদ থেকে নেয়ার পরও জমিটি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে তারা। জমিটির সম্পূর্ণ দলিলপত্র ও আমার নামে সৃজত খতিয়ান আছে। কিন্তু তারা ভূয়া হেবা দলিল দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছে। পরে আমি আদালতের শরণাপন্ন হই। আদালত আমার পক্ষে রায় দেন এবং ওই চক্রটির বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমার বসতভিটায় এসে হামলা চালিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়। আমি ও আমার পরিবারের নামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। ঘটনাস্থল ঈদগাঁও থানার আওতায় হলেও তারা চকরিয়া থানায় ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘জমি দখলে আমরা বাধা দিলে আমি ও আমার পরিবারের উপর অমানবিক বর্বর নির্যাতন চালায়। ভারি অস্ত্র দিয়ে আমার কপালে আঘাত করে এবং আমার পরিবারের এক সদস্যের মুখে আঘাত করে দাঁত ভেঙে দেয়। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেলে একদল দুর্বৃত্ত খলিলুর রহমানের বসতবাড়িতে ঢুকে দুইজনকে পিটিয়ে জখম করে। পরে তারা তাদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা বৃদ্ধসহ আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এদিকে এ বিষয়ে চকরিয়ার বিতর্কিত যুবক রাজিব চৌধুরী ও বাহাদুরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম বলেন, ‘জায়গা নিয়ে হামলার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে ঘটনাস্থলে আমাদের টিম পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর