কক্সবাজারে পাহাড় কাটছেন প্রশাসনের দুই কর্মচারী

শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার :

কক্সবাজারে ৫১ একর আবাসন প্রকল্পকে ৫৬ একরে রূপ দিতে প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মচারীর নেতৃত্বে আরও পাঁচ একর পাহাড় কেটে ও বনাঞ্চল উজাড় করে বসতি নির্মাণের কাজ চলছে।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন দুবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও দমেনি এ দখলবাজ সিন্ডিকেট। রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে রাতদিন বসতি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। যাদের নেতৃত্বে এ দখল কার্যক্রম চলছে তারা হলেন ৫১ একর আবাসন প্রকল্পের সভাপতি ও চকরিয়া কাকরা ভূমি অফিসের এমএলএসএস (অফিস সহায়ক) সুলতান মোহম্মদ বাবুল ও সিভিল সার্জন অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মোহাম্মদ ইয়াছিন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সরকারি কর্মচারী জুলফিকার আলি ভুট্টো, মাছন ফকির, ইয়াকুব মাঝি ও জয়নাল সওদাগরসহ ১০ জনের সিন্ডিকেট।

এদিকে, দুবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ কলাতলীর ওই ৫১ একর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে সরকারি পাহাড় ও গাছ কাটার সত্যতা পাওয়ায় সেখানে লাল কালিতে সরকারি জমি লিখে সাইনবোর্ড স্থাপন, বাঁধ অপসারণ ও বনায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পাহাড় ও বনাঞ্চল উজাড় করে স্থাপনা বানানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমানকে নির্দেশ দেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, পাহাড় ও বনাঞ্চল উজাড় করে বসতি নির্মাণের সঙ্গে সরকারি কয়েকজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে যারা জেলা প্রশাসনে রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে যে বসতি গড়ে উঠেছিল তা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যদি আবারও বসতি গড়ে ওঠে তাহলে তাও উচ্ছেদ করা হবে।

পরিবেশবিষয়ক স্বেছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, এক মাস ধরে ১৫-২০ রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে দিনরাত প্রকাশ্যে সরকারি একটি বিশাল পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হলে কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৮ জুন জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ৫১ একর আবাসন প্রকল্প বরাদ্দ বাতিল, পাহাড়ের কোনো অংশ না কাটা, রক্ষিত বন এলাকায় সব ধরনের স্থপনা উচ্ছেদ করা ও বন ধ্বংস না করার আদেশ দেন। তার পরও উচ্চ আদালতের রায় তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস করে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরকারি কর্মচারী সুলতান মোহাম্মদ বাবুল ও মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ৫৬ একর প্রকল্পে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার মূল ব্যক্তি হচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসনের নাজির স্বপন কান্তি পাল। আমরা তার আদেশ বাস্তবায়ন করছি। ৫১ একরে যারা প্লট পাননি তাদের জন্য পাঁচ একর পাহাড় সমান করা হচ্ছে।

স্বপন কান্তি পাল বলেন, বর্তমানে পাহাড় ও বনাঞ্চল উজাড় করে বসতি নির্মাণের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে এবং অপকর্ম ঢাকতে তারা আমার নাম জড়াচ্ছে।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা দ্রুত পালন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুই দফা পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

/যুগান্তর

আরও খবর