নিজস্ব প্রতিবেদক •
শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের সাথে মিশে গেছে শত শত রোহিঙ্গা যুবক। কক্সবাজার জেলা পুলিশ আজ বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘণ্টা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সমুদ্র সৈকতসহ শহর থেকে ৪৪৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক আটক হয়েছে কেবল সমুদ্র সৈকত থেকেই। উখিয়া ও টেকনাফের শিবির ছেড়ে কক্সবাজার সৈকতে এসে পর্যটকদের মতো করেই এসব রোহিঙ্গারা ঈদের আনন্দ উপভোগ করছে।
সাগরে গোসল করতে গিয়ে একজন রোহিঙ্গার মৃত্যুও ঘটেছে। অপর একজনকে উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার করেছে। জেলা প্রশাসনের নিয়োজিত বিচকর্মী মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন, দুই রোহিঙ্গা তরুণ সৈকতে গোসল করতে নেমে এক পর্যায়ে ঢেউয়ের টানে ভেসে যাচ্ছিল। এমন সময় উদ্ধারকর্মীরা দুজনকেই উদ্ধার করে। এর মধ্যে সাইফুল নামের একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। রায়হান নামের অপর এক রোহিঙ্গা জীবিত রয়েছে।
এদিকে ঈদ পরবর্তী আজ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অন্তত লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজার সৈকতে। সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেলগুলোর কোনো কক্ষই এখন খালি নেই। সৈকতে গিজ গিজ করছে পর্যটকে। এমন পরিস্থিতিতে লাখো পর্যটকের সাথে রোহিঙ্গাদের একাকার হবার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর আইন-শৃংখলার দেখভাল করার জন্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) এর ৪টি ব্যাটালিয়ানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপরেও এভাবে রোহিঙ্গারা ফ্রি স্টাইলে শিবির থেকে কিভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সরকার উখিয়া ও টেকনাফে নির্ধারিত স্থানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের খাওয়া-দাওয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে যাবার কোনো সুযোগ নেই।’
পুলিশ সুপার জানান, শিবির ছেড়ে শত শত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে। তিনি আরো জানান, আটক রোহিঙ্গাদের আপাতত শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ঈদ পরবর্তী দেশের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটছে কক্সবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে সৈকতে পর্যটক বেশে রোহিঙ্গারা একাকার হয়ে নানা অপরাধজনক কাজে জড়িত হয়ে পড়েছেন। অনেক পর্যটকও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে যে, তারা (পর্যটক) রোহিঙ্গাদের হুমকি পাচ্ছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে বিনা অনুমতিতে বেরিয়ে কক্সবাজার জেলাসহ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার খবরে পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানিয়েছেন, সমুদ্র সৈকতে রোহিঙ্গাদের সাজগোজ আর কাপড়-চোপড় দেখে কে রোহিঙ্গা আর কে পর্যটক তা পরখ করতেও কষ্ট হয়েছে। কেবল ভাষাগত দিক দিয়েই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে আটক করতে হয়েছে।
জেলা পুলিশের সাথে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদুল ইসলাম, সৈকতে কর্মরত ২০ জন বিচকর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ অভিযানে কেবল সৈকত থেকেই আটক করা হয়েছে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা। এসব আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে দামি কাপড়-চোপড় ও প্রসাধনী নিয়ে সাজগোজ করা কয়েক ডজন রোহিঙ্গা তরুণীও রয়েছে।
সৈকতে কর্মরত বিচকর্মীরা জানিয়েছেন, সৈকতে রোহিঙ্গা ধরার অভিযানে গিয়ে রীতি মতো পুলিশও চমকে উঠেছে। রোহিঙ্গা যুবক-যুবতীদের মূল্যবান কাপড়-চোপড়ে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল তারা আদৌ রোহিঙ্গা কি না।
এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি পোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আটক করছে। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় যতসব অপরাধজনক ঘটনা ঘটেছে এসবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সম্পৃত্ততা শনাক্ত হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আটকও হয়েছে। আটক হওয়া সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সবাজার সৈকতে আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিবির থেকে আসা বিপুল সংখ্যক মাদরাসায় পড়ুয়া আলখেল্লা পরিহিত রোহিঙ্গাও রয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা সন্দেহও দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, মাত্র কয়েক ঘণ্টার অভিযানে যদি এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আটক হয়ে থাকে তাহলে পুরো কক্সবাজার জেলা শহরে কত হাজার আর কত লাখ রোহিঙ্গায় ভরে গেছে তা ভাবনার সময় এসেছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-