গিয়াস উদ্দিন ভুলু •
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার কারাগারে আটক থাকা ৪১ জন বাংলাদেশী নাগরীককে সীমান্ত প্রহরী বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার।
২৩ মার্চ (বুধবার) সকালে মিয়ানমার মংডু শহরে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সাথে এক পতাকা বৈঠক অনুষ্টিত হয়। উক্ত বৈঠকে টেকনাফ ২ বিজিবির কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করে মিয়ানমার।
তারা দুই থেকে সাড়ে সাড়ে ৬ বছর কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা জানান। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, সাগরে মাছ শিকার এবং মালয়েশিয়া যাত্রাকালে মিয়ানমারের আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে।
বিজিবি জানায়, মংডুতে সকাল ১১টায় ২ টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখারের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শো-এর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফেরত বাংলাদেশিদের মধ্য টেকনাফ উপজেলার ২২জন ২১ জন পুরুষ,১জন নারী। সিলেট মোলভী বাজার ১জন, উখিয়ার ২জন, বান্দারবান ৭ জন, রাঙ্গামাটি ৮জন খাকড়াছড়ি ১জন। তাদের মধ্য ২-২৯ বছর সাজা ভোগ করে মিয়ানমার কারাগারে কষ্টের দিন পার করছিল।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিকেল ৪ টায় দিকে ওই ৪১ বাংলাদেশিকে নিয়ে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায়। এসময় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
পরে বিকেলে জেটি ঘাটে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, লে.কনেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ, টেকনাফ ২ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন মো.মাসুম রেজা, অপারেশন অফিসার লে:এম মুহতাসিম বিল্লাহ শাকিল, টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরফানুল হক চৌধুরী, থানার অপারেশন খোরশেদ আলমসহ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মিদের জানান,পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ওই ৪১ জনকে ফেরত আনা হয়। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, বৈঠকে সম্প্রতি সময়ে শাহপরীর দ্বীপে আটক ১৮ জেলেকে মুক্তি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে, কিন্তু বিজিপি রাজি হয়নি। তাদের বিষয়ে তদন্ত শেষ করে কতৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে এখনো মাদক ইয়াবা ও আইস চালান অনুপ্রবেশের কথা বলেছি, তাঁরা তাদের সীমান্তে মাদক বিরুধী অভিযানের কথা উল্লেখ করেন।
বিজিবির অধিনায়ক শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানা অতিক্রম বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের বলেছি, যদি জলসীমানা থেকে কোন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়,তাৎক্ষনিকভাবে আমাদের অবিহত করে সমাধান করা হয়। তাছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তিও রয়েছে। বিশেষ করে সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।
সবচেয়ে বেশি সাজা খেটে ফেরত আসা মো.আইয়ুব ও করিম উল্লাহ। তারা দুজই টেকনাফ উপজেলা বাসিন্দা। গত সাড়ে চার বছর আগে সেন্টমাটিনে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের ২৯ বছর সাজা প্রদান করলেও সাড়ে চার বছর সাজা শেষে তারা ফেরত আসে।
তারা জানান, সাড়ে চার বছর মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ করেছেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের সাজা দেওয়া হয়। সেদেশে কারাগারে অনেক কষ্ট। তারা ঠিকমতো খাবার দিতেন না।
কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টের দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান এ দু’জন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-