নোয়াখালীর কিশোরী “বান্ধবীকে” বিয়ের উদ্দেশ্য চলে গেল টাঙ্গাইলে

 

নিউজ ডেস্কঃ ফেসবুকের মাধ্যমে দুই কিশোরীর পরিচয়। বন্ধুত্ব থেকে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। একজনের বাড়ি নোয়াখালী, আরেকজনের বাড়ি টাঙ্গাইল। ১৫ ও ১৭ বছর বয়সী এই দুই কিশোরীর মধ্যে দুই বছর ধরে চলেছে প্রেম, হয়েছে সাক্ষাৎ। অবশেষে সোমবার (২১ মার্চ) প্রেমের টানে দূরপথ পেরিয়ে নোয়াখালীর কিশোরী সংসার করতে চলে এসেছে টাঙ্গাইল। পরিবার মেনে না নিলে প্রয়োজনে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করে জীবন চালাতেও প্রস্তুত তারা। বিষয়টি নিয়ে বাসাইল উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিশোরীর পরিবার পড়েছেন বিপাকে।

স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কিশোরী প্রায় দুই বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচিত হয়। সেই থেকেই ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তাদের। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের টানে তারা প্রায় দুই মাস আগে ঢাকার সাভারে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত্রিযাপনও করেন। এরপর সেখান থেকে আনোয়ার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তারা সিরাজগঞ্জের চৌহালী গিয়ে রাত কাটায়। সেখানে স্থানীয়দের দুই কিশোরীর আচরণ সন্দেহজনক হলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দুই পরিবারের কাছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ রবিবার (২০ মার্চ) তাদের দুই জনের ফোনে কথা হয়। এরপর সন্ধ্যায় নোয়াখালীর কিশোরী টাঙ্গাইল শহরে চলে আসে। পরে বাসাইল থেকে গিয়ে তাকে নিয়ে আসে অপর কিশোরী। ওই রাতেই তাদের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাদের দেখতে দলে দলে লোকজন বাড়িতে ভিড় জমান। এই দুই কিশোরীর সংসার করার সিদ্ধান্তে কিশোরীদের স্বজনরাও হতভম্ব।

স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশে সমলিঙ্গের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকৃত নয়। দুই কিশোরীর অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার মতো না। খুব দ্রুত দুই মেয়েকেই পৃথক করা প্রয়োজন। কিশোরীদের
অপরিণত চিন্তা এবং অবান্তর সিন্ধান্তের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে তাদের স্বাভাবিক নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

টাঙ্গাইলের কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি দেড় মাস বয়সে তাকে পালক নিয়ে আসি। ও আমার আদরের একমাত্র সন্তান। তার কাজে আমি খবুই কষ্ট পেয়েছি। নোয়াখালীর ওই মেয়েটিকে তার বাড়িতে চলে যেতে বলছি, সে যাচ্ছে না। সে কিছুতেও আমার মেয়েকে ছাড়া যাবে না। পরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে তারা এখানে আসবে না বলে আমাকে জানায়। প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেকান্দার আলী স্বপন বলেন, ‘নোয়াখালীর ওই মেয়েটি রবিবার সন্ধ্যায় এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দুই কিশোরীর দাবি- তারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকবে না। তারা গার্মেন্টসে চাকরি করে একত্রে সারাজীবন কাটাবে বলে জানিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা একে অপরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’

দুই কিশোরীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের তৈরি হয়। আমরা এখন কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে নোয়াখালীতে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। মেয়েটির প্রকৃত অভিভাবকের খুঁজে পেলে তাদের হাতে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দেবো। আর তার পরিবার খুঁজে না পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

বাসাইল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গেও কথা হয়েছে। নোয়াখালীর ওই মেয়েটির পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মেয়েটির পরিবার এলে তাকে ফিরিয়ে দিতে বলেছি।’

সুত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন

আরও খবর