ফয়সাল রাব্বীকিন •
শনিবার মধ্য রাত। একটি রাজকীয় বিয়ের আয়োজন। রাজধানীর মাদানী এভিনিউ’র শেফস টেবিলের কোর্টসাইড তখন সেজেছে অন্যরকম রঙে। চারদিকে উৎসবের আমেজ। এমন সময় সংগীতশিল্পী ঐশীর কণ্ঠে ভেসে আসলো ‘দুষ্টু পোলাপাইন’ গানের কলি। সাড়া দিলেন বলিউড ক্রেজ সানি লিওন। সঙ্গে সঙ্গে কোমর দোলাতে দোলাতে উঠে আসলেন মঞ্চে। ঐশীর পুরো গানজুড়েই নাচলেন তিনি।
তার সঙ্গে নেচেছেন বাংলাদেশের সংগীতের বেশক’জন তারকা। সানি লিওনের এই নাচের ভিডিও এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ক’দিন আগেই প্রকাশিত ঐশীর এ গানটির ভিডিও চিত্রে পারফর্ম করেছিলেন সানি লিওন। এবার সরাসরি গানটিতে নাচলেন তিনি।
দু’দিন আগেই ঢাকার মিডিয়ার শিরোনামে ছিলেন সানি লিওন। বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করেছে। ‘সোলজার’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয়ের কথা ছিল তার। সরকার চিঠি দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের দুইদিন পর ঢাকায় ব্যক্তিগত জেট বিমান নিয়ে হাজির সানি লিওন। আসেন বিয়ের দাওয়াতে। পারফর্মও করেন। বলা হচ্ছে এটি প্রাইভেট ভিজিট। এই ভিজিট নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানামুখী বিতর্ক। সরকার ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের পর কেন তাকে এভাবে নিয়ে আসা হলো। তাকে কি পারিশ্রমিক দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বলা হচ্ছে ওই বিয়ের আয়োজনে অংশ নেয়ার বিনিময়ে সানি লিওন কয়েক কোটি টাকার পারিশ্রমিক নিয়েছেন।
সানিকে ঢাকায় নিয়ে আসা গান বাংলা টেলিভিশনের এমডি কৌশিক হোসেন তাপসের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো কিছুই খোলাসা করা হয়নি। একান্ত ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে সানি এসেছেন নাকি পারিশ্রমিক নিয়ে তিনি ঢাকা সফর করেছেন এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না গান বাংলার কারও কাছ থেকে।
এর আগে ২০১৫ সালে পরিকল্পনা করেও ঢাকায় আসতে পারেননি এক সময়ের নীল দুনিয়ার এই নায়িকা। তখন ধর্মীয় সংগঠনগুলো তীব্র আপত্তি তুলেছিল। তবে এবার আর সেই প্রতিবাদের সুযোগ মেলেনি। দুইদিন আগে সরকারিভাবে তাকে কাজের সুযোগ না দেয়ার ঘোষণা আসায় কেউ ভাবতেও পারেনি দুইদিন পর তিনি ঢাকায় আসবেন। এমন অবস্থায় আচমকা ঢাকার বিমানবন্দরে নেমে সানি নিজেই জানান দিলেন তার আগমনী। ঢাকায় পা রাখার ছবি শেয়ার করেন নিজের ফেসবুক ও ইনস্ট্রাগ্রামে।
বলিউডের হাল সময়ের আলোচিত এই অভিনেত্রীর হঠাৎ ঢাকায় আসাকে কেউ স্বাগত জানিয়েছেন। আবার কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
মূলত ট্যুরিস্ট ভিসায় ঢাকায় আসেন সাবেক নীল ছবির এ তারকা। এখানেই শেষ নয়। রাজকীয় এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়েও চলছে আলোচনা। কাছাকাছি সময়ে দেশি-বিদেশি তারকাদের অংশগ্রহণে এত বড় আয়োজনের বিলাসবহুল বিয়ে তেমন একটা দেখা যায়নি। গানবাংলা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন ফারজানা মুন্নী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস দম্পতির কন্যা নাজিশ আরমানের সঙ্গে ডা. মির্জা বেগের ছেলে সালমান মির্জা বেগের এই বিয়ের রিসিপশন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণেই বাংলাদেশে আসেন সানি লিওন। ১৫ ঘণ্টার এই ঝটিকা সফরে সঙ্গে আসেন তার স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারসহ একটি টিম। গত শনিবার রাতেই শেফস টেবিলের কোর্টসাইডে আয়োজন করা হয় জমকালো সেই রিসিপশন অনুষ্ঠান। এই আয়োজনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। যেখানে সানি লিওনের সঙ্গে বাংলাদেশের গায়িকা ঐশী, প্রতীক হাসান, তাসনিম আনিকা, পূজাসহ অনেককেই নাচতে দেখা গেছে।
এদিকে সানি লিওন একা নন, এই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলিউড-টলিউডের আরও কয়েকজন তারকা। এদের মধ্যে ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী নার্গিস ফাখরি, গায়ক কৈলাস খের, ‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত গায়িকা শেফালি জারিওয়ালা, সংগীত জুটি মিট ব্রস ও অদিতি সিং শর্মা। এ ছাড়াও কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরাত জাহানও এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে। নুসরাতের সঙ্গে ছিলেন তার সঙ্গী অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত। সানি লিওন ঢাকা সফরে এসে হাই প্রোফাইল বিয়ের সেই অনুষ্ঠানে জানান, এদেশে এসে তিনি আনন্দিত। সবার আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ।
এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় সানি লিওন, তার স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারসহ পুরো টিম ঢাকা ছেড়েছেন। একই বিমানে তাদের সঙ্গে ঢাকা ছাড়েন মিমি চক্রবর্তী, মিট ব্রস ও শেফালিরা। বাকিরাও গতকালই ঢাকা ছাড়েন বিভিন্ন সময়। ঢাকা ছাড়লেও ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হওয়ার পরও সানি লিওনের এই সফর, রাজকীয় বিয়েতে অংশ নেয়া নিয়ে চলছে জোর আলোচনা ও বিতর্ক।
গত শনিবার বিকালে ফেসবুক পেজে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে একটি ছবি পোস্ট করে সানি লিওন নিজেই ঢাকায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ছবিটির ক্যাপশনে সানি লিওন লেখেন, সুন্দর দেশটিতে এসে খুব খুশি আমি। ঢাকায় আসার পর সানি লিওনকে বরণ করে নেন গানবাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংগীতশিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস।
উল্লেখ্য, গত ২রা মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সানি লিওনের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হয়। একটি সিনেমার শুটিংয়ের জন্য তাকেসহ ভারতের ১০ জন অভিনয়শিল্পীকে ওই অনুমতি দেয়া হয়।
ওই অনুমতিপত্রে সানি লিওনের আসল নাম বা পাসপোর্ট এর নাম করনজিৎ কর ওয়েভার উল্লেখ ছিল। তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই নামে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সানি লিওন অনুমতিপত্র নিয়েছিলেন। গত ৯ই মার্চ আরেকটি প্রজ্ঞাপনে সানির বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়। ওয়ার্ক পারমিট বাতিলের পেছনে অনিবার্য কারণ উল্লেখ করা হলেও বলা হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই এটি করা হয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-