চকরিয়ায় ভুঁইফোড় সংগঠনের চলছে চাঁদাবাজি!

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া •


আওয়ামিলীগ ও সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও “বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ” নামের ভুঁইফোড় সংগঠনের ফরম দিয়ে চকরিয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ফটোকপি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে একটি চক্র ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রিংভং এলাকায় ২০০-২৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এনিয়ে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সচেতন জনগণ।

সরেজমিনে ফরম ক্রেতা এলাকার একাধিক ষাটোর্ধ ব্যক্তি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম ও ছবি দেখে বিশ্বাসের সাথে এ ফরমগুলো কিনেছেন। এছাড়া জড়িতরা আর্থিক সহায়তা সহ অনেক কিছু দিবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তাদের।

ফরম ক্রেতা লোকজন জানান, এলাকার আবদুস সালাম এবং মইগ্যারমার ছড়া এলাকার আবদুর রহিম মিস্ত্রিসহ কয়েকজন ফরমগুলো বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত ৪০-৫০ টি ফরম বিক্রি করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আমান উল্লাহ আমান জানান, আওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা মতে বাংলাদেশে ১৭ টি বৈধ সংগঠন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে এই সংগঠন গুলোর অনুমোদন দেয়। ট্রাস্ট অনুমোদনের বাইরে ‘আওয়ামী’, ‘লীগ’ এবং বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের নামে শতশত সংগঠন থাকলে সবগুলোই অবৈধ।

কিছুদিন ধরে আমাদের ডুলাহাজারায় একটি কুচক্রী মহল “বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ” নামের সংগঠনের ফরম ব্যবসা শুরু করেছে। অর্থ সম্পদ দেয়ার কথা বলে সহজসরল মানুষদের ধোকা দিচ্ছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামিলীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম বলেন, এটি একটি অবৈধ সংগঠন। ইতিপূর্বে ভুঁইফোড় সংগঠন খোলে জনগণকে বিভ্রান্ত ছড়ানো ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। অনেকে জেলও খেটেছেন। এসব বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার থাকতে বললেন তিনি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় “বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ” -এর জেলা সভাপতি নেজাম উদ্দিন নামের ব্যক্তির সাথে। এ সংগঠনের বৈধতা প্রমাণ করতে তিনি প্রতিবেদকের মোবাইলের ইমুতে কিছু ছবি ও সমাজ কল্যান অধিদপ্তর প্রদত্ত একটি সনদের ফটোকপি প্রেরণ করেন। কিন্তু এ সনদে প্রশ্নবিদ্ধ নানান ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে।

এছাড়াও “সমাজ কল্যান অধিদপ্তর” -এই নাম কোন মন্ত্রণালয়ের শাখা-উপশাখায় পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিখ্যাত চার্স ইঞ্জিন গুগল-ও এ নামের সন্ধান দিতে পারেনি। ঢাকার প্রোগ্রামে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তিনি নিজে অব্যহতি নিবেন বলে জানান সংগঠনটির জেলা সভাপতি নেজাম।

ভুঁইফোড় সংগঠনের ফরম বিক্রেতা আবদুর রহিম মিস্ত্রি বলেন, আওয়ামিলীগের কোন অনুদান আসলে বড়-বড় নেতারা তা নিয়ে যায়। আমরা আওয়ামিলীগ করেও কিছু পাইনা। এ সংগঠনের মাধ্যমে সবকিছু দেওয়া হবে। বিকাশে টাকা-পয়সা সহ অনেক কিছু।

ফরম বাবদ টাকা নেয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ফরমে লেখাজোকার কাজ শেষ করতে সভাপতির অনেক সময় লাগবে। এরপর ওগুলো ঢাকায় পৌঁছাবে। সবকিছুর খরচ বাবদ একেকটি থেকে দু’শ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। অপর অভিযুক্ত আব্দুস সালাম, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে টাকা নেয়ার বিষয় অস্বীকার করেন। ফরম বিক্রির টাকাগুলো এখনো কেউ দেননি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, এরকম সংগঠনের সরকারি বা দলীয় কোনপ্রকার অনুমোদন নেই। এগুলো সব ভুয়া সংগঠন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব সংগঠন আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।

আরও খবর