মিজবাউল হক •
নিহত পাঁচ ভাইকে দাহ করার পূর্বে ময়নাতদন্ত না করা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন একই পরিবারের ছয় সহোদরের মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। এধরণের ঘটনা অতীতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু নিছক দূর্ঘটনা নাকি পরিকিল্পত কোন হত্যাকান্ড তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
তিনি প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চান, ওইদিন পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হওয়ার পরও কেন তাদের ময়নাতদন্ত করা হলো না? কারা মরদেহের ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ সৎকারে ইন্ধন জুগিয়েছে তাদের সনাক্ত করারও দাবি তুলেন তিনি।
মঙ্গলবার নিহত আরেক ভাই রক্তিম সুশীলের মরদেহ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ময়নাতদন্ত করিয়েছি। তিনি আরও বলেন, এই পরিবারের যে অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ থাকবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি দ্রæত যাতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে সেজন্য সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। এসময় তিনি দূর্ঘটনা কবলিত স্থানটিও পরিদর্শন করেন এবং বক্তব্য রাখেন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১টার দিকে সড়ক পথে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ হাসিনা পাড়ার মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে আসেন তিনি। এসময় বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, আমরা শত চেষ্টা করলেও ছয় ভাইকে মায়ের কুলে ফিরিয়ে দিতে পারবো না। ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
ইতোমধ্যে তাদের আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের আশ্রয়ন প্রকল্পের অধিনে ঘর বরাদ্দের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
চকরিয়া পৌরসভা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নারায়ন কান্তি দাশের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন-আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষচারী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান মহিলা ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া দেবী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পাবনা সৎসঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঋত্বিক শ্রী রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ কার্যকরী সভাপতি সজীব সিং রুবেল, কক্সবাজার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, চকরিয়া উপজেলার সভাপতি রতন বরণ দাশ, চকরিয়া উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ প্রমুখ।
পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আড়াই লাখ টাকা, ইসকনের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য প্রদান করেন।
এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশিদ ১ লাখ ৩৫ হাজার নগদ টাকা এবং শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ’র পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা ও পোশাক সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় আরও সাথে ছিলেন- চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, সহকারি কমিশনার (ভুমি) রাহাত-উজ জামান, চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) তফিকুল আলম, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরী, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম-সম্পাদক রাধা গৌবিন্দ দাস, ঐক্য পরিষদ কক্সবাজারের যুগ্ন-সম্পাদক চ ল দাশগুপ্ত, চকরিয়া পৌরসভা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনিপ দাশ সৌরভ, ঐক্য পরিষদ চকরিয়া উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক উদয়ন শর্মা, ঐক্য পরিষদ ডুলাহাজারা ইউনিয়নের আহবায়ক মানিক দে ও সদস্য সচিব নোটন ধর প্রমুখ।
এদিকে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রক্তিম সুশীলের মরদেহ চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটস্থ হাসিনা পাড়ার নিজ বাড়িতে ধর্মীয় আচার শেষ করে অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে মৃত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধানুষ্টান পূর্বে ক্ষুদান্ন দান শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঘাতক পিকআপ চাপায় পাঁচ ভাই নিহত ও তিন ভাই-বোন আহত হন।
পরে আহতদের মধ্যে রক্তিম সুশীল গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এদের মধ্যে বোন হীরা সুশীল মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-