কক্সবাজারের কয়েকটি মেঘা প্রকল্প ও চট্টগ্রামে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। বুধবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিনকে (উপসহকারী পরিচালক, পটুয়াখালী) চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধিমোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। এই আদেশ ১৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) থেকেই কার্যকর বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাকরি থেকে অপসারণের চিঠি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে। দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এ রকম কোনো কাজ করিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মো. শরীফ উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক থাকাকালে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি আলোচিত অভিযান ছিল। তারমধ্যে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্স (পিবিআই) অফিস তৈরির জন্য এক একর (১০০ শতক) জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে দুদকের এ কর্মকর্তার তদন্তে। এ ঘটনাসহ কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহায়তা ও জালিয়াতি করে জন্ম নিবন্ধনের মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল, রফিকুল ইসলাম এবং পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন শাখার অফিস সহকারী দিদারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারও আগে জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত শীর্ষ দালাল ও সাবেক সার্ভেয়ারকে গ্রেফতার করে শরিফ উদ্দিন।
সূত্র আরও জানায়, শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় সাবেক মন্ত্রীপুত্র, নির্বাচন কমিশনের পরিচালক, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), রেলওয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও মামলা করেছেন। গত ১৬ জুন তাঁকে পটুয়াখালী বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, শরীফের করা তদন্তে কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি আইয়ুব খান চৌধুরীর দুই ছেলে আশেক উল্লাহ চৌধুরীকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ও অপর ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুটি নিয়োগের ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয় বলে শরীফের তদন্তে উঠে আসে।
এদিকে দুদকের ছাড়পত্র গোপন ও অনিয়মের মাধ্যমে কেজিডিসিএলে মধ্যরাতে ৬২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলেও শরীফের তদন্তে উঠে আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রাহকের বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও অবৈধভাবে পুনঃসংযোগ দেওয়ার তথ্যও উঠে আসে শরীফের তদন্তে।
কিন্তু শরীফের বদলির পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এসব বিষয়ে আবার তদন্ত করেন চট্টগ্রামের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক। তাঁরা আইয়ুব খান চৌধুরীর নিয়োগ ও ৬২ কর্মকর্তার পদোন্নতিতে কোনো অনিয়ম খুঁজে পাননি।
আইয়ুব খান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতাও পাননি। এমনকি অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগের সত্যতাও খুঁজে পাননি তাঁরা। ৫ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান, যা গত ১৩ জানুয়ারি দুদক মহাপরিচালকের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-