আজাদী •
প্রয়াত বাবা সুরেশ চন্দ্র শীলের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আগেরদিন মঙ্গলবার ভোরে আমরা সাত ভাই ও দুই বোন বাড়ি থেকে বের হই। এর পর বাড়ির কাছেই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মহাসড়কের পাশে নির্জন এলাকায় ‘দণ্ডি’ দিতে যাই। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমরা বাড়ি ফেরার জন্য মহাসড়কের পাশে অন্তত দুই ফুট দূরে দাঁড়াই। তখনই দানবের মতো একটি মিনি পিকআপ আমাদের দিকে ধেয়ে আসতে দেখে ভাইদের সতর্ক করি।
সেই পরিস্থিতিতে আমি এবং ছোট ভাই প্লাবন শর্মা সামনের কাতারে থাকা ছয় ভাই ও বড় বোনকে সরানোর চেষ্টা করি। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘাতক পিকআপটি ভাই-বোনকে চাপা দেয়। এ সময় ধাক্কায় আমি এবং ভাই প্লাবন পড়ে যাই পাশেই। তখন ভাইদের অবস্থা বেগতিক দেখে চালক পিকআপটিকে ফের পেছনে এনে ভাই-বোনদের দ্বিতীয়বার চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়।
পরিবার সদস্য কারো সাথে অজ্ঞাত চালকের পূর্ব শত্রুতা না থাকলেও এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন গত মঙ্গলবার ভোরে মালুমঘাট ট্রাজেডির সময় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মুন্নী শর্মা। গতকাল বুধবার দুপুরে হাসিনা পাড়ায় শোকার্ত পরিবারের কাছে গেলে কথা হয় প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের কন্যা মুন্নী শর্মার সঙ্গে। এ সময় সেইদিনের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ঘটনার দিন দুপুরেও একই কথা বলেছিলেন প্রাণে বেঁচে ফেরা ছোট ভাই প্লাবন শর্মা। বাবার মৃত্যুর দশদিনের মাথায় একসঙ্গে পাঁচভাইকে হারিয়ে অনেকটা পাগলের মতো অবস্থা হয়েছে তার।
চলন্ত অবস্থায় দুর্ঘটনাবশত কোন মানুষকে একবার চাপা দেওয়ার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফের চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে কী-না?
এমন প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি যানবাহনের চালক বলেন, চালকেরা কোনভাবেই এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন না। এর পরও ব্যতিক্রমী অনেক ঘটনাই ঘটে থাকে। হয়তো কোন ব্যক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হলে পরবর্তী চিকিৎসা ব্যয় এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ নানা ঝামেলার সম্মুখিন হতে হয় চালককে। তাই অনেক সময় ফের চাপা দেওয়ারও অহরহ নজির রয়েছে। তাই এটিও অসম্ভব কিছু নয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, নির্মম এই ঘটনার পর থেকে আমাদের কানেও এসেছে বিষয়টি। কেউ কেউ বলছেন, দ্বিতীয়বার চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই বিষয়টি গভীরভাবে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. সাফায়েত হোসেন জানান, এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে প্লাবন শর্মা বাদী হয়ে থানায় মামলা রুজু করেছেন। আশা করছি সহসাই চালককেও আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, পরিবারের দাবি অনুযায়ী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড না-কী নিছক দুর্ঘটনা তা বিশদ তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। তাই পিকআপ চালক ও মালিককে ধরতে পারলেই আসল বিষয় খোলাসা হবে। ইতোমধ্যে যেহেতু নাম্বারসহ ঘাতক পিকআপটি (চট্টমেট্টো-ন-১১-৪৭৪০) জব্দ করা সম্ভব হয়েছে, সেহেতু চালক-মালিকও সহসা ধরা পড়বে। এজন্য পুলিশ বেশ তৎপর রয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-