বাহরাম খান •
উপজেলা পরিষদের অর্থে পরিচালিত কার্যক্রমে পরিষদ চেয়ারম্যানের কর্তৃত্ব থাকবে। আর সরকারি অর্থপুষ্ট কার্যক্রমে উপজেলা প্রশাসন তথা ইউএনওদের কর্তৃত্ব থাকবে। আইন অনুযায়ী এই নিয়ম মেনে চলতে হবে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে।
দুই প্রতিষ্ঠানেরই কাজের সীমা নির্ধারণ করা আছে। কেউ যেন কারও সীমা লঙ্ঘন না করে, সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। একই সঙ্গে উপজেলা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে হওয়া রিট মামলাগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘উপজেলা পরিষদ হস্তান্তরিত বিষয়ে কার্যক্রম পর্যালোচনা, পরামর্শ প্রদান এবং নির্দেশনা জারি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপজেলা পরিষদ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে কোনো পক্ষের শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেবে না সরকার। একই সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের এই কমিটির বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রতি ছয় মাসে এ সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে যাতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে সব পক্ষকে তাদের টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) মেনে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে বলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বলতে যা বোঝায়, উপজেলা তা নয়। সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা আইনের শিরোনামে স্থানীয় সরকার কথাটি উল্লেখ আছে। কিন্তু উপজেলা পরিষদ আইনে তা নেই।
‘সরকার’ শব্দটির মাধ্যমে কার্যত রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি যুক্ত। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় করলেও উপজেলা পরিষদের নিজস্ব রাজস্ব আদায়ের সুযোগ নেই।
আর সেই সুযোগ করা হলে স্থানীয় নাগরিকদের ওপর দ্বিগুণ রাজস্ব আরোপ করতে হবে। যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, উপজেলা পরিষদের এমন সুযোগ না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে দু-একটি খাতের কিছু অর্থ পরিষদের ফান্ডে দেওয়া হয়।
সেই ফান্ড পরিচালনার সম্পূর্ণ এখতিয়ার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের। একইভাবে উপজেলার ফান্ডে যদি অন্য কোনো বিদেশি বা কোনো সংস্থার অনুদান যোগ হয়, সেটাও পরিষদ চেয়ারম্যানের এখতিয়ারে খরচ হয়।
উপজেলা পরিষদে ইউএনও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অবস্থান অনুযায়ী, উপজেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ।
তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ ১৭টি অফিস উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত হলেও সরাসরি সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কার্যক্রম ও সরকারের রাজস্ব খাতের অর্গানোগ্রামভুক্ত এসব অফিসের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি উপজেলা পরিষদে অঙ্গীভূত হয়নি।
আইনে উল্লিখিত যে কার্যসীমা উপজেলা পরিষদের আছে শুধু সেইসব বিষয়ে ১৭টি অফিসের বিষয় উপজেলা পরিষদ দেখভাল করবে।
এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ম্যাজিস্ট্রেসি, পাবলিক পরীক্ষা, নির্বাচন, সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত, প্রোটোকল, ভূমি রাজস্ব প্রশাসন, দিবস-কর্মসূচি উদ্যাপন প্রভৃতি বিষয়ে আইন অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন দায়িত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গার্ডিয়ান হিসাবে যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন, সেটা নিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনায় যাতে অহেতুক গণ্ডগোল না লাগে, সেজন্য আইনকানুন সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সেই সঙ্গে উপজেলা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় সুরাহা করতে নিয়মিত ‘উপজেলা পরিষদ হস্তান্তরিত বিষয়ে কার্যক্রম পর্যালোচনা, পরামর্শ প্রদান এবং নির্দেশনা জারি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র বৈঠক অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার, সমবায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, ক্রীড়া ও যুব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ ডজনখানেক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও তাদের উপযুক্ত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-