চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন, প্রস্তুতি সামান্য

অনলাইন ডেস্ক :

দুনিয়াজুড়েই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্ক বাড়ছে। ওমিক্রন ধরনটির কারণে যুক্তরাজ্যে উচ্চহারে বাড়ছে সংক্রমণ। সাউথ আফ্রিকায়ও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সমপ্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধরনটি উদ্বেগজনক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। এটি মোকাবিলায় আগেভাগেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

বাংলাদেশসহ ৭৭টি দেশ এ পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত। দেশে গত ১১ই ডিসেম্বর প্রথম দুই নারী ক্রিকেটার ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। এই পর্যন্ত ধরনটিতে তিনজন শনাক্তের খবর দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই।

নতুন ধরনটি মোকাবিলায় নানান সতর্কতার কথা বলা হলেও দৃশ্যত ঢিলেঢালা প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে দেশে।

করোনায় মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৬০ বছর ও তার বেশি বয়সী মানুষের। দেশে এই বয়সীদের ৩৭ শতাংশ মানুষ এখনো করোনার টিকার প্রথম ডোজই পাননি। এরই মধ্যে সরকার পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পাওয়া এই বয়সীদের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুস্টার ডোজের দরকার আছে, তবে বেশি দরকার ঝুঁকিতে থাকা বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা। যারা একেবারে টিকা পাননি তাদেরকে আগে টিকা দিতে হবে। তারা শতভাগ ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তাদের মতে, দেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ নিয়েছেন পূর্ণ ডোজ টিকা। আর ৪০ দশমিক ১১ শতাংশ পেয়েছেন প্রথম ডোজ।

করোনার টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রথম সারির কর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ। দেশে এই বয়সী মানুষ আছেন ১ কোটি ৩১ লাখ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ই ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৭ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ২১৮ জন। তাদেরই মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৭ জন।

আর দ্বিতীয় ডোজ বা পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন ৪ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৭২৩ জন। সবমিলে ১১ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬০ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে। এখনও নিবন্ধন করে ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮১ জন এক ফোঁটা টিকাও পাননি। আবার ২ কোটি ৩১ লাখ ৭ হাজার ১১৪ জনের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে।

কিন্তু তা না করেই বুস্টার ডোজে হাঁটছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ দশমিক ১১ শতাংশ প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন মাত্র ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বিবিএস’র সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জন। বেশি বয়স্ক মানুষ নানা ধরনের রোগে ভোগেন। করোনায় তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে ২৮ হাজার ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হবে। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে ৬০ বছর ও এর বেশি বয়সী মানুষ এবং সম্মুখসারির কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তিনি বলেন, বুস্টারের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, আমরা বুস্টার ডোজ দেবো। যারা ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার যারা আছে তাদেরও দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেননি এমন মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যারা এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি কম, যারা দুই ডোজ পেয়েছেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম। সুতরাং বেশি মানুষকে টিকার আওতায় এনে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, বুস্টার ডোজ দিয়ে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে না। যারা একেবারে টিকা পাননি তাদেরকে আগে টিকা দিতে হবে। তারা শতভাগ ঝঁকিতে রয়েছেন।

এদিকে ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী ও ফ্রন্টলাইনারদের মধ্যে যাদের অন্তত ছয় মাস আগে করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা সম্পন্ন হয়েছে তাদের বুস্টার ডোজ দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বাংলাদেশের শনাক্ত হওয়ায় কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

১৪ই ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ার ৪৪টি দেশ-অঞ্চলে টিকাদানের হিসাব তুলে ধরে বলেছে, বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন।

আরও খবর