ডেস্ক রিপোর্ট :
মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাদের খাদ্য, বাসস্থান, অভাব-অভিযোগ তথা আশ্রয় সংক্রান্ত ব্যয়ও বাড়ছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য মিয়ানমারে সেনা নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি দাতাগোষ্ঠীগুলোর সহায়তা ও সমর্থন ধীরে ধীরে কমছে। চার বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পরপর দাতাগোষ্ঠীর প্রতিশ্রুত সহায়তার ৭৪ ভাগ বাস্তবায়িত হলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল।
কিন্তু বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) তাদের সেই অঙ্গীকারের বিপরীতে অর্থ পাওয়া গেছে মাত্র ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। শতাংশের হিসাবে কোনোমতে তা ৩৪ ভাগে ঠেকেছে।
পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে- ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাতাদের কাছ রোহিঙ্গাদের জন্য ২৬২ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা মিলেছে। প্রত্যাশিত তহবিল জোগাড় না হওয়ার প্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে ১৮ কোটি ডলারের অতিরিক্ত অনুদান প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফগানিস্তানে নতুন করে মানবিক সংকট আর প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে দাতারা রোহিঙ্গাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারা বলছেন, যে হারে বৈদেশিক সহায়তা কমছে, তাতে ১০ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ তৈরি করবে।
অর্থাৎ সংকট প্রলম্বিত হলে এ দায়িত্ব এককভাবে বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়তে পারে!
রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো বছরই রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য চাহিদার পুরো অর্থ আসেনি। ২০১৯ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা অর্থায়ন আগের বছরের তুলনায় অব্যাহতভাবে কমছে।
এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স এবং ফরেন পলিসি এনালিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ জমসেদ অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিষয়ক জার্নালে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। ‘বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গারা অনেক বড় অর্থনৈতিক বোঝা’- শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি সংকটের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে তিনি সমস্যার সমাধান নিয়েও আলোচনা করেছেন।
এদিকে পেশাদার কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, সহায়তা কমার পেছনে আফগানিস্তান ইস্যুর একটা বড় প্রভাব রয়েছে। আমেরিকা যখন সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে, এর পরবর্তীতে সেখানে মানবিক জীবনযাপন শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটা অনেকাংশে দুর্বল হয়ে গেছে আফগানিস্তানের মানবিক বিপর্যয়ের কারণে।
আরেকটি ব্যাপার হলো, দাতারা দেখতে পাচ্ছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে চান না। রোহিঙ্গাদের কবে নাগাদ আমরা প্রত্যাবাসন করতে পারবো, সে বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ তৈরি হয়নি।
বাংলাদেশ সরকার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে, কিন্তু বিশ্ব সমপ্রদায়ের কোনো চাপই কাজে আসছে না। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় অনুদান কমে যাওয়ার বাস্তব উদাহারণ এখন রোহিঙ্গা ক্রাইসিস।
এম./জমিন/এসএম
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-