কক্সবাজার জার্নাল প্রতিবেদক :
সমাজে পিছিয়ে পড়া ও নানান বৈষম্যের শিকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং সম্ভাব্য ইউপি সদস্যদের নিয়ে ভিন্নধর্মী এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে উখিয়ার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার।
গত ৩০ অক্টোবর (শনিবার) ডিজাবিলিটি লিডারশীপ লার্নিং সেন্টারে জালিয়াপালং ১নং ওয়ার্ড থেকে ইউপি পদে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সাথে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূলস্রোত ধারায় আনয়নে প্রার্থীদের পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে হেলপ কক্সবাজার এর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ম্যানেজার সাকিল আহমেদ হেলপ কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনার বিষদ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, জালিয়াপালং ইউনিয়নে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ১২শ ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম জরিপের মাধ্যমে উঠে আসে। যার মধ্যে ১৯৭ জনকে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়ক যন্ত্র প্রদান ও তাদের আয়মূলক উৎপাদনের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে বিভিন্ন উপকরণের প্রদানের কথা উল্লেখ করেন এবং বাকী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক যন্ত্র, উপকরণ দেওয়ার প্রচেষ্টা চলমান বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, যারা প্রতিবন্ধিতা এবং অটিজমে ভুগছেন তাদের ভালোভাবে লেখাপড়া করে যত্ন নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায়। তারা যেন মূলস্রোতের সঙ্গে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে থাকতে পারে সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অনেক।
তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আলাদাভাবে দেখতে হবে। তাদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যদি কেউ অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে ও প্রতিবছর ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং ইউনিয়ন স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এসময় উপস্থিত সদস্যরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এ সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের জীবন-জীবিকার পথ সম্প্রসারিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাসের সুযোগ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সবাইকে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
তাই আমাদের পরিষদের পক্ষ থেকে যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা সেটা করতে চেষ্টা করব। সরকারের যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, আমরা তাদের দেওয়ার চেষ্টা করব বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তারা।
হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, এখানে যেটা সবচাইতে বড় প্রয়োজন সেটা হলো আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ছোটবেলায় পড়েছি কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দিতে হবে। সবাই মানুষ সবাই একসঙ্গে চলবে এটাই হচ্ছে বড় কথা। আমরা চাই দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তার বাইরে নয়। তাদের ভেতরের সেই শক্তিকে বের করে আনতে হবে। তাদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধিতার শিকার, তাদের জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে সমাজে নিজের মতো করে বাঁচতে পারে- এটাই আমাদের চাওয়া। এই বিশ্বাস আমাদের আছে এবং এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাই। সরকার যথেষ্ট কাজ করছে। তার সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগগুলো যুক্ত হয়েছে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাব। সবার সমন্বিত উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজের পরিবেশ ও দক্ষতা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো কাজের জন্য সরকারের যেমন প্রকল্প থাকে, তেমনি উন্নয়ন সহযোগীদেরও প্রকল্প থাকে। প্রকল্পের মাধ্যমেই কাজ হয়। আমাদের মূল কাজটা ছিল স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ থাকে। এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তা সমাজে প্রচার করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সমাজের কল্যাণ করার জন্য বাজেট রয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ বাজেট থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে। বাজেটের অর্থ তাদের মধ্যে সঠিকভাবে বণ্টন করা হলে তাদের সত্যিকার কল্যাণ হবে এবং তাহলে তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারবে। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-