“মুহিবুল্লাহ উঠ”-বলে গুলি করে হত্যা করে ৫ অস্ত্রধারী!

ইমরান আল মাহমুদ:
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় ৪জনকে আটক করেছে ১৪এপিবিএন।
শনিবার(২৩ অক্টোবর) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ১৪এপিবিএন পুলিশ সুপার নাইমুল হক।

তিনি জানান,শনিবার ভোরে লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের আওতাধীন লোহার ব্রীজ এলাকা হতে ১টি ওয়ান শুটারগান এবং ১ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ মুহিবুল্লাহ হত্যার কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হক কে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্যাম্প-১ ইস্টের আব্দুল মাবুদের ছেলে মো. রশিদ মুরশিদ আমিন,ক্যাম্প-১ ওয়েস্ট এর ফজল হকের ছেলে মো. আনাছ ও ক্যাম্প-১ ওয়েস্ট এর নুর সালামের ছেলে নুর মোহাম্মদ কে আটক করা হয়।

কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আটক আজিজুল হকের বরাত দিয়ে এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক আরও জানান,মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে ২৭ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১০টায় লম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিং এ কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ধৃত আসামী আজিজুল হকসহ আরও ৪জন উপস্থিত ছিলো। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে উক্ত মিটিংয়ে আলোচনা হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছে। তাকে থামাতে হবে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের পর মাস্টার মহিবুল্লাহ তার শেডে ফিরে গেলে আসামী মুরশিদ আমিন মুহিবুল্লাহকে নিজ শেডের বাইরে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলে এবং কিছু লোক তার সাথে অফিসে কথা বলবে মর্মে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়।

পরে আসামী মুরশিদ আমিন মহিবুল্লাহ’র নিজ অফিসে অবস্থান সম্পর্কে অপর দুই আসামী মো. আনাছ ও নুর মোহাম্মদ এর নিকট নিশ্চিত করে দ্রুত অফিস এলাকা ত্যাগ করে। তারা মাস্টার মহিবল্লাহ কে হত্যা করার জন্য দুর্বৃত্তদের ঘটনাস্থলে আসার সংকেত প্রদান করে। দুর্বৃত্তদের দলটি ১-ডব্লিউ সিআইসি অফিসের পাশে আরটিসিসি অফিস সংলগ্ন সি-৮ ব্লকের মধ্য দিয়ে চিকন গলি ব্যবহার করে পেঁপে বাগানের দিকে একটি শেডে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো।

আসামীদের নিকট হতে সংকেত পাওয়ার পর পূর্বে থেকে অবস্থান নেওয়া দুর্বৃত্তদের দলটি ক্যাম্প ওয়কনইস্ট এর ডি-৮ ব্লকের রাস্তা ব্যবহার করে মাস্টার মহিবুল্লাহ’র অফিসে চলে আসে। এ সময় মুখোশধারী ৭জন তাদের সাথে যুক্ত হয়। দুর্বৃত্তদের দলটির মধ্য থেকে ৩জন অস্ত্রধারী মহিবুল্লাহ’র অফিস কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় আসামী মো. আনাছ ও নুর মোহাম্মদ অপর অস্ত্রধারী আসামী আজিজুল হক ও আরও একজন অস্ত্রধারীসহ ৪জন মহিবুল্লাহ’র অফিস কক্ষের প্রবেশ দরজায় অবস্থান নেয়।

ঘটনার সময় মাস্টার মহিবুল্লাহ ১০-১৫ জন লোকসহ অফিসে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসা অবস্থায় ছিলেন। এ সময় অফিস কক্ষে প্রবেশকারী অস্ত্রধারীদের মাঝে একজন মাস্টার মহিবুল্লাহ’কে বলেন “মহিবুল্লাহ উঠ”। মহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালে প্রথম দুর্বৃত্ত একটি, দ্বিতীয় দুর্বৃত্ত দুইটি এবং সর্বশেষ দুর্বৃত্ত একটি সহ মোট ৪টি গুলি করে।

পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দুর্বৃত্তকারী দলটি হত্যাকান্ড সংগঠনের পর আসামী আজিজুল হক অপর দুই আসামী সহ মহিবুল্লাহ’র অফিস সংলগ্ন পেছনের রাস্তা দিয়ে পেঁপে বাগান হয়ে পালিয়ে যায়। হত্যা কান্ডের পরে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায় এবং সকলেই নিজ নিজ মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। কিলিং স্কোয়াডে ৫ জন অস্ত্রধারী ছিলো বলে সংবাদ সম্মেলনে এপিবিএন পুলিশ সুপার জানান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত অন্যান্য দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য এপিবিএন এর অভিযান কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর