মিয়ানমার থেকে কৌশলে আসছে আইস

ডেস্ক রিপোর্ট •

দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে মিল ছিল নতুন মাদক ‘আইস’ (ক্রিস্টাল মেথ)। মাদকদ্রব্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলে আসছেন, এই মাদক ভয়ংকর, মারণঘাতী। সেই মাদকের বড় চালান জব্দ হলো রাজধানীতেই! ১০০ বা ২০০ গ্রাম নয়, পাঁচ কেজি আইস উদ্ধার হলো এবার। শুক্রবার রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এই অভিযান চালায়।

এ সময় মো. হোছেন ওরফে খোকন এবং মোহাম্মদ রফিক নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছে অস্ত্র ও গুলি পাওয়ার কথাও জানিয়েছে র‌্যাব।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ওই দু’জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দেশে এ যাবৎ উদ্ধার হওয়া আইসের চালানগুলোর মধ্যে এটাই বড়। এর আনুমানিক মূল্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা। নতুন মাদকের এই চালান কৌশলে এসেছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে। গ্রেপ্তার দু’জন টেকনাফকেন্দ্রিক বড় মাদক কারবারি। এক সময়ে তারা ইয়াবা পাচারে জড়িত থাকলেও এখন আইস পাচার শুরু করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, মিয়ানমারে এক গ্রাম আইসের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে এর দাম ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি গ্রামে ১৩ থেকে ২৩ হাজার টাকা বেশি লাভ পেতে মিয়ানমার থেকে দেশে আইস আনা শুরু করে টেকনাফের বাসিন্দা হোছেন ওরফে খোকন। এ আইস বিক্রি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তার সহযোগী রফিক অটোরিকশা চালানোর ছদ্মবেশে এসব মাদক বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, খোকন টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। দেশে আইস নিয়ে আসার অন্যতম হোতা সে। তার গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ সদস্য রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণত নৌপথ ব্যবহার করে বার্মিজ কাপড় ও আচার ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালান আনে দেশে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ‘অভিজাত’ শ্রেণির কাছে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় পুরোনো এই ইয়াবা কারবারিরা কয়েক মাস ধরে আইস পাচার করে নিয়ে আসছিল।

গ্রেপ্তার দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, পাচার হয়ে আসা এই নতুন মাদক দেশে ধরা পড়লে মিয়ানমারে চালানের টাকা দিতে হয় না। এজন্য অনেকটা ঝুঁকিমুক্তভাবেই এই পাচার শুরু হয়েছে। খোকনের সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বার্মিজ আচার ও কাপড় আনার নাম করে অবৈধভাবে নিয়মিত মিয়ানমারে যাতায়াত করত। মাদকের টাকা লেনদেন করে হুন্ডির মাধ্যমে। খোকনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, আইস বা ক্রিস্টাল মেথে ইয়াবার মূল উপাদান অ্যামফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এজন্য মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও এই মাদক বেশি ক্ষতি করে। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিস্ক বিকৃতি, স্টোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা, মানসিক অবসাদ ও বিষণ্ণতা তৈরি হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সেবনকারী আত্মহত্যাও করতে পারে। এই মাদক সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।

আরও খবর