ইয়াবার জন্য বন্ধুকে বন্ধক!

মরিয়ম চম্পা •

মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা কারবার। সম্প্রতি ২০০০ পিস ইয়াবার বিপরীতে এক যুবককে বন্ধক রাখে তার বন্ধু। ভুক্তভোগী বন্ধু বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই তার পরিবারের কাছে ভিডিও কল দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী যুবকের পরিবার রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি অপহরণ মামলা করে। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সমপ্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে। মহানগর গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্রাট ওরফে ফরহাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব সামির ওরফে লাদেনের। মাঝেমধ্যেই তারা বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে ঘুরতে যেতেন।

গত ২রা সেপ্টেম্বর লাদেনের ফোন পেয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যান ফরহাদ। কক্সবাজারে যাওয়ার পর থেকেই ফরহাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

২৪ দিন পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল নামে এক ব্যক্তি ফরহাদের বাবার মুঠোফোনে ফোন করে জানায় তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ছেলেকে সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেতে হলে তাদের সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। ছেলেকে ফিরে পেতে ফরহাদের বাবা হারুণ অর রশিদ প্রথম দফায় নগদ টাকা বিকাশ করে পাঠানোর পরে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে তিনি গত ২৯শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম ছায়াতদন্ত শুরু করে। এ সময় মানুষ বন্ধকের বিনিময়ে মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত বড় একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন সাবরাং এলাকা থেকে গত ২রা অক্টোবর অপহৃত ফরহাদকে উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এ সময় অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্য সাব্বির আহমেদ, সাদ্দাম হোসেন ও নুরুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বীকার করেন, ফরহাদকে বন্ধক রেখে তার বন্ধু লাদেন টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনেছিল। সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত চার জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফরহাদের বন্ধু এবং প্রধান অভিযুক্ত লাদেনকে গত ৩রা অক্টোবর ঢাকার একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে লাদেন জানায়, অর্থের সংকট থাকায় নগদ টাকা দিয়ে ইয়াবা ক্রয়ের সামর্থ্য ছিল না। তাই সে বন্ধু ফরহাদকে বন্ধক রেখে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে রাজধানীতে দুই হাজার পিস ইয়াবা এনেছিল। ইয়াবা বিক্রি করে ফরহাদকে ছাড়িয়ে আনার কথা থাকলেও যথাসময়ে টাকা পাওয়ায় আগেই পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে তারা।

মামলার অন্যতম আসামি নুরে আলম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেক আসামি সাদ্দামের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা রয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা মানবজমিনকে বলেন, চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার করা হলেও আরও একাধিক সদস্যকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের উপ-কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে ইয়াবা কেনাবেচা হয় এটা আমরা জানতাম। কিন্তু এখন ইয়াবা পাচারকারীরা বিনা পয়সায় ইয়াবা দিচ্ছে মানুষকে বন্ধক বা জিম্মি রেখে। এটা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর এবং নতুন ঘটনা। চক্রের অন্য সদস্যদের আটক করতে গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আরও খবর