কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ খুঁজে পায়নি ইউজিসি পরিদর্শক দল

ডেস্ক রিপোর্ট •

 

বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিবিআইইউ) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অর্থবছরেই আইন অনুযায়ী আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা করেনি এ বিশ্ববিদ্যালয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত নয় বছরের নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরীক্ষা শেষ করতে না পারলে আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদ বাতিল হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে সুপারিশও করেছে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক এ কমিশন।

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ে সাত বছরের জন্য সাময়িক অনুমতি সনদ দেয় সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বর্ণিত ১০টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ অনুমতি দেয়া হয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে অনধিক ২১ ও অন্যূন নয় সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন, পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণীকক্ষ, গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরি, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমনরুমসহ পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকা, ২৫ হাজার বর্গফুটের নিজস্ব বা ভাড়া বাড়ি, শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিতসংখ্যক পূর্ণকালীন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা, নিবিড় পাঠ্যক্রম ও কোর্স প্রণয়ন এবং আসন সংখ্যার অনুমোদন, সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে এলাকাভেদে দেড় থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা। যদিও সাময়িক অনুমতির সাত বছরে এর কোনো শর্তই পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করেনি সিবিআইইউ।

সাময়িক অনুমতির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গত বছর তা নবায়নের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নবায়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরিদর্শনে যায় ইউজিসির একটি প্রতিনিধি দল। ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম কোনো পরিবেশ খুঁজে পায়নি ইউজিসির ওই পরিদর্শক দল।

পরিদর্শনে পাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে সেগুলো বন্ধে সুপারিশ এনে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দিয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিটি সিবিআইইউ রেজিস্ট্রারকে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনীত অডিট ফার্ম দিয়ে এখন পর্যন্ত অডিট করা হয়নি, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিগত কয়েক বছরের অডিটসহ হাল বছরের অডিট সম্পন্ন করতে হবে। এ সময়সীমার মধ্যে নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির সনদ বাতিল ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

সিবিআইইউর শিক্ষার পরিবেশ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ক্যাম্পাস মোটেও শিক্ষাবান্ধব নয়। ক্যাম্পাস ভবনটি মূলত আবাসিক হোটেলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে মর্মে দৃশ্যমান হয়। ভবনটির নিচে বাণিজ্যিক স্থাপনা ও বাস টার্মিনাল বিদ্যমান থাকায় সেখানে সকাল থেকে রাত অবধি ব্যাপকভাবে গোলযোগ ও শব্দদূষণ লেগেই থাকে। ক্লাসরুম, কমনরুম ও শৌচাগার কোনোটিই শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। এজন্য আগামী এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দুই একর জমি কিনে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করতে বলা হয়েছে।

ব্যবস্থাপনাগত অনিয়মের বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো উপাচার্য, উপউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এমনকি প্রশাসনিক অন্য পদগুলোতেও স্থায়ী কোনো কর্মকর্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গত বছর মাত্র একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সিন্ডিকেটে কমিশন ও সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য এবং উপাচার্য মনোনীত ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নেই। প্রতিষ্ঠার সাত বছরে কোনো সমাবর্তনই অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও সিলেবাস হালনাগাদ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে সবশেষে বলা হয়েছে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আগামী এক বছর সাময়িক অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক শিক্ষার মান বিবেচনায় এ সময়কালে নতুন ছাত্র ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি তিন মাস অন্তর শর্তাদির বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে পাঠাবে। এ সময়ের মধ্যে কমিটির সুপারিশগুলো প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে সাময়িক সনদের মেয়াদ বৃদ্ধি সমীচীন হবে না বলে কমিটি মনে করে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। সিবিআইইউ ক্যাম্পাস পরিদর্শক দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাময়িক অনুমতি নবায়নের বিষয়ে আমরা কক্সবাজারে তাদের কার্যক্রম পরিদর্শনে যাই।

পরিদর্শনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা তা প্রতিপালন করবে।

আরও খবর