জাগোনিউজ২৪:
চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আয়োজন করার প্রস্তুতি চলছে শিক্ষা বোর্ডগুলোতে। আগামী নভেম্বরের শুরুতে এসএসসি-সমমান ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাই নভেম্বরে ২০২১ সালের অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অক্টোবরের যে কোনো দিন শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা যায়।
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের উপর আয়োজন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সময় ও নম্বর কমিয়ে নেওয়া হবে এসব পরীক্ষা। আবশ্যিক কিংবা চতুর্থ বিষয়ের কোনো পরীক্ষা এবার হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ‘বিষয় ম্যাপিং’ করে দেওয়া হবে আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয়ের নম্বর। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড থেকে জানা যায়, আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর এসএসসি-সমমান পরীক্ষা শুরু করতে একটি খসড়া রুটিন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন দিলে পরীক্ষা শুরুর ১৫ দিন আগে সে রুটিন প্রকাশ করা হবে। আর আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করতেও খসড়া রুটিন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে পাঠানো হয়েছে। এখন শুরু করার অপেক্ষায়।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডগুলোতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল তৈরিতে ব্যস্ত থাকবে। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা প্রতি বছরের নভেম্বরে আয়োজন করা হলেও এবার তা বাতিল করে অটোপাসের ঘোষণা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। আগামী মাসের (অক্টোবর) যে কোনো দিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী মহাদয়ের ঘোষণা অনুসারে আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজ চলছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষার ফরম পূরণ শেষ হবে। এরপর প্রবেশপত্র তৈরির কাজ শুরু করা হবে।
চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছরের আর মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি রয়েছে। এর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আগামী মাসের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী এ পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এ বছরের যে কয়দিন সময় রয়েছে সে সময়ের মধ্যে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করতে পার হয়ে যাবে। এরপর পরের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ দুই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করে প্রকাশ করা হবে।
তারা জানান, জেএসসি-জেডিসি স্তরে অটোপাস দেওয়া হলে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট ও পঞ্চম শ্রেণির পিইসি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ‘বিষয় ম্যাপিং’ করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। এ পরীক্ষা নেয়াওর মতো কোনো শিডিউল শিক্ষা বোর্ডগুলোতে নেই। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন ও ফলাফল প্রকাশের কাজ শেষ করতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পার হয়ে যাবে।
‘চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষা নিতে চাইলে আগামী বছরের মার্চে নিতে হবে। তবে সে সময় ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু করতে হবে বলে সে সুযোগও নেই। তাই চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষা আয়োজন করার কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেই। অটোপাস ঘোষণার আলাপ-আলোচনা চলছে।’
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে বোর্ডগুলোয়। পরীক্ষার রুটিন তৈরির কাজও চলছে। ইতোমধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজও শেষ। সেগুলো ট্রেজারিতে চলে গেছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোরও বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।
জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে নেহাল আহমেদ বলেন, এটি পাবলিক পরীক্ষা নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির আদেশে এ পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। আমরা এখনো এ পরীক্ষার কিছুই জানি না। জেএসসির প্রস্তুতি বোর্ড নিজ থেকে নিতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেটি তারা বাস্তবায়ন করবেন।
এ বিষয়ে অক্টোবরের মধ্যে ঘোষণা আসতে পারেন বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-