কক্সবাজার জার্নাল রিপোর্ট •
উখিয়ার একমাত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হেলপ কক্সবাজার এর সহায়তায় উখিয়া ও রামু উপজেলায় স্বাবলম্বী ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এসডিপি প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে স্কুল ঝরে পড়া একশো যুবক-যুবতী।
০৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সরেজমিনে উক্ত প্রকল্পের কার্যক্রমের ২০টি ট্রেড পরিদর্শন করেন হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম।
এসময় তিনি কম্পিউটার, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং এবং ট্রেইলারিং ট্রেডের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের উৎসাহিত করেন।
পরিদর্শন শেষে স্কুল ঝরে পড়া ও অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, যারা মাধ্যমিক শিক্ষাচক্রে অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়াতে এসডিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ সকল ছেলেমেয়েরা যেন বেকার না থাকে এবং নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করতে পারে এই সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার জন্য এসডিসিকে ধন্যবাদ। এই অদক্ষ ও বেকার জনগোষ্ঠিকে দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।
তাই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষায় দ্বিতীয় সুযোগ প্রদান করা একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্কুল ঝরে পড়া ও যারা সাধারণ শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত না তারা যাতে নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেই প্রচেষ্টা করা হবে এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। কেউ যাতে বেকার ঘরে বসে না থাকে, ঘরের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন উপার্জনমুখী পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন হেলপ কক্সবাজার এর নির্বাহী পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়া তারুণ্যের একটি বড় অংশ বেকার থাকলেও, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কাসহ বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। কেননা, কাজের জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন, বাংলাদেশি তরুণদের অনেকের মাঝে তা নেই। তাই চাহিদানুযায়ী দক্ষ কর্মী হতে এ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
সুতরাং এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আধুনিক বিশ্বে, বৈজ্ঞানিক যুগে, দক্ষতানির্ভর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই ঝরে পড়তে হয়, কিংবা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যবঞ্চিত হতে হয় সঠিক দক্ষতার অভাবে। তাই ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও এ সত্য উপলব্ধি করে মেনে নিতে হবে যে, বর্তমান সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে দক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই টিকে থাকা যাবে না।
সর্বমহল যদি একই সাথে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে নিতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি দেশেও গড়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি, ফলে ঘুচে যাবে বেকারত্বের অভিশাপ।
তিনি প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্পের ১৪ থেকে ১৮ বয়সের স্কুল ঝড়ে পড়া ছেলে মেয়ে কারিগরি শিক্ষার আওতায় এনে তাদের জন্য উপার্জনের পথ তৈরি করা হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হতদরিদ্র ও এতিম পরিবারের সন্তান এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ভাতা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্যও ভাতা রাখা হয়েছে। ছয় মাস প্রশিক্ষণের পর তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা বিনামূল্যে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারে।
এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি, স্থায়ীত্বশীলতা, ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করেন।
নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন যাতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন দক্ষ হয়ে ওঠে।
উক্ত প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, হেলপ কক্সবাজার’র সহযোগীতায় এসডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে তারা খুবই খুশি। তারা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় এ প্রকল্প না থাকলে হয়তো টাকার অভাবে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে পারতোনা। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত জীবনের স্বপ্ন এখন তাদের চোখে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে আমরা আর বোঝা হয়ে থাকবো না এবং প্রতিযোগিতার বর্তমান যুগে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে ভাগ্যোন্নয়নের চেষ্টা করবেন বলে জানান তারা। তাই তারা সুইজারল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এসডিসি), ব্র্যাক এবং হেলপ কক্সবাজার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
মাঠ পর্যায়ের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনকালে হেলপ কক্সবাজার’র এসডিসি প্রকল্পের ফোকাল পার্সন মোঃ সাদেকুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মোঃ মঈনুল ইসলাম মুবিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এসডিসি)র অর্থায়নে ব্রাকের কারিগরি সহযোগিতা এবং হেলপ কক্সবাজার এর বাস্তবায়নে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম(এসডিসি) প্রকল্প উখিয়া এবং রামু উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি, স্থানীয়করণ, নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা এবং তাদের সচেতনতার বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে তুলে তাদের কর্মমুখী করা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-