টেকনাফে গরু-মহিষ আমদানি বন্ধ: রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল •

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রাজস্ব আয়রের অন্যতম স্থান চট্রগ্রাম বিভাগের দক্ষিন সীমান্ত টেকনাফে অবস্থিত মিয়ানমার থেকে আমদানি করা গবাদী পশুর এক মাত্র করিডোর দীর্ঘ এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মিয়ানমার কেন্দ্রিক গবাদী পশু ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। কারন তারা মিয়ানমারে থাকা গবাদী পশু ব্যবসায়ীদেরকে সেখান থেকে গরু-মহিষ ক্রয় করে করিডোরে পাঠানোর জন্য কোটি কোটি টাকা দাদন দিয়েছে। পশু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

এর আগে কোরবানির ঈদে গেল ৯ জুলাই দেশের খামারিদের লোকসানের কথা চিন্তা করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র করিডোর টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের গবাদিপশু আসা বন্ধ থাকায়, উদ্বেগ জানান ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ শুল্ক বিভাগ জানায়, চোরাইপথে গবাদিপশু আসা রোধে ২০০৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোডের দ্বিতীয় সচিব টাস্কর্ফোস এর পক্ষ থেকে টেকনাফ ক্যাটল করিডোর স্থাপনের বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশের জন্য চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারে কাছে একপি পত্র প্রেরন করেন।

যার নথি নং ৩ (১৬)শুল্ক (নি: ও পরি )/ ৯৭ (অংশ-২)/৪৯ তারিখ ১২-০১-২০০৩। এরপর থেকে সেই বছর ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপ করিডোর চালু করে সরকার। সেখানে প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫০০ এবং ছাগল থেকে ২০০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। বিজিবি ও শুল্ক বিভাগের তত্ত¡াবধানে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজস্বগুলো আদায় হয়। করিডোর প্রতিষ্ঠার পর গবাদিপশু আমদানি থেকে সরকার প্রায় ১৮ বছরে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা রাজস্ব আয় করে। তবু করিডোরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনও স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।’

গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, “হঠাৎ করে কোরবানির ঈদের আগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে পশু আমদানি বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসক। এতে করে আমরা যারা ১৮ বছর ধরে করিডোরে ব্যবসা করছি, তাদের লোকসান হয়েছে। কেননা আগে থেকে কোন নির্দেশনা না দিয়ে পশু আমদানি বন্ধ করে দেয়। তাতে সেখানে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে রাখা অনেকে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পরতে হয়েছে।”
শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে দেখা যায়, দ্বীপের জেটি ও বাঁধের আশপাশ যেসব এলাকা দিয়ে পশুবাহী ট্রলার খালাসের জন্য ভিড় করতো, সেই এলাকা এখন খাঁ খাঁ করছে। লোকজনের আনাগোনাও নেই বললেই চলে।

জেটিতে বসে থাকা মোহাম্মদ জিয়াবুল জানান, ‘আমি যেখানে বসে রয়েছি, এক মাস আগেও এটি খুব ব্যস্ত এলাকা ছিল। কিন্তু এখন নিরিবিলি পড়ে আছে। ফলে এখানকার ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের মন্দায় দিন কাটছে। পাশাপাশি আমরা যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে রয়েছে তাদের দূর্দিন যাচ্ছে। কেননা এখানে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আসলে আমার মত অনেকে দৈনিক মজুরী করে সংসার চালায়। অন্তত এসব মানুষদের কথা চিন্তা রেখে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরী। অন্যদিকে পশু আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে মাংসের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দাম বেড়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে মাংসের দামও।’

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, ওপারের গরু না আসার কারনে এই এলাকার কয়েক’শ মানুষের বেকারত্ব দিন কাটছে। ফলে এসব পরিবারগুলো কষ্টের দিন পার করছে। আবার অনেকে অভাব দূর করতে মাদকসহ অপরাধমুলক কাজে জড়িয়ে পরছে। তাদের দাবি যত দ্রæত সম্ভব মিয়ানমারের পশু আমদানি খুলে দেওয়া হোক।

এদিকে কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ ৩৫ লাখ মানুষের বসতি। ফলে এই অঞ্চলে গরু চাহিদাও রয়েছে। মিয়ানমার থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা মাংসের দামও বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের আমদানিকারক সমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ মনির জানান, “এক মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া এ ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষের জড়িত রুটি-রুজগার। এ সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।”

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনায় কোরবানির ঈদের আগ থেকে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেটি এখনো চলমান রয়েছে।’
সর্বশেষ চলতি বছরের গত মে ও জুনে ২৫ হাজার ৮৬৮টি গরু ও চার হাজার ২৫৮টি মহিষ মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়। তখন আমদানি বাবদ এক কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করে শুল্ক বিভাগ।

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থল বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মো. আব্দুন নুর জানান, ‘সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। এই হাট থেকে বড় অংক রাজস্ব আয় হতো আমাদের। জেলা চোরাচালান নিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। সেটি এখনো বলবৎ রয়েছে।’

আরও খবর